প্রস্তুত: চলছে নকল সরবরাহ। নিজস্ব চিত্র।
মাধ্যমিকের প্রথম দিনটা মোটের উপর নির্বিঘ্নে কাটলেও মঙ্গলবার ইংরেজি পরীক্ষায় নকল রুখতে ঘাম ছুটল পুলিশের।
গত কয়েক বছর ধরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় বাইরে থেকে নকল সরবরাহ নিয়ে রীতিমতো নাজেহাল মালদহের বেশ কিছু স্কুল। পরীক্ষা শুরুর আগে এই নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন পর্ষদের কর্তারা। কিন্তু অবস্থার যে পরিবর্তন হয়নি, এ দিন ইংরেজি পরীক্ষা শুরু হতেই তা স্পষ্ট হল ইংরেজবাজার, মানিকচক-সহ জেলার একাধিক স্কুলে।
নকল সরবরাহ রুখতে ইংরেজবাজারের সান্তা দেবীয়া হাইস্কুলে মোতায়েন ছিল সিভিক ভলান্টিয়ার ও হোমগার্ড-সহ জনা দশেক পুলিশকর্মী। কিন্তু তাদের সামনেই কেউ প্লাস্টিকে মোড়ানো কাগজের টুকরো, কেউ ঢিলের সঙ্গে সুতো দিয়ে বাঁধা কাগজ নিয়ে দাপিয়ে বেড়ালো। সকাল থেকেই আম বাগান ঘেরা স্কুলের চারপাশে দাঁড়িয়েছিল বেশ কয়েকজন যুবক। পরীক্ষা শুরু হতেই তৎপর হয় তারা। পুলিশ কর্মীদের মাথার উপর দিয়ে একের পর এক কাগজের টুকরো উড়ে যেতে থাকে স্কুলের দিকে।
এক পুলিশ কর্মী বলেন, “শ’য়ে শ’য়ে যুবক নকল হাতে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিল। একদলকে সরাতে গেলে অন্যদিক থেকে নকল নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায় অন্য যুবকেরা। ঢিলের সঙ্গে নকল বেঁধে আমাদের মাথার উপর দিয়ে ছুড়ে দিচ্ছিল তারা।” পুলিশের সামনেই নকল পৌঁছতে দেখা গিয়েছে অনেককেই। পরীক্ষার্থীদের কেউ শৌচাগারের পিছনে কিংবা স্কুলের জানলায় দাঁড়িয়ে নকলের জন্য সঙ্কেত পাঠালেই যুবকদের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের একাংশও ছুটেছে নকল নিয়ে। শুধু সান্তা দেবীয়া স্কুলই নয়, ইংরেজবাজারে ভর্তিটারি হাইস্কুল
রায়গ্রাম হাইস্কুল, মানিকচকের কালিন্দী হাইস্কুলের মতো স্কুলেও দেখা গিয়েছে এমন ছবি।
এই প্রবণতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মধ্যশিক্ষা পর্ষদের কর্তারা। পরীক্ষা়র আগেই জেলার স্পর্শকাতর, অতি স্পর্শকাতর কেন্দ্রগুলি চিহ্নিত করে সিসিটিভি বসানো হয়। বাইরে থেকে নকল সরবরাহ করা হলে ভিতরে তা কাকে দেওয়া হচ্ছে চিহ্নিত করে সেই পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হবে বলেও জানান কর্তারা। তারপরেও এ দিনের ঘটনায় কপালের ভাঁজ গাঢ় হয়েছে আরও।
এক পুলিশ কর্মী বলেন, ‘‘পরীক্ষা কেন্দ্রের ভেতরে নজরদারি কড়া করলে বাইরে থেকে নকল দেওয়ার প্রবণতা কমবে।’’ যদিও সান্তা দেবীয়া স্কুলের শিক্ষকদের দাবি, পরীক্ষার হলে নকল করতে না পেরেই বাইরে আসছে পরীক্ষার্থীরা। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘প্রয়োজনে পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে।’’
মালদহতেই মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে ঢোকায় দুই পরীক্ষার্থীর খাতা ও মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তাদের পরীক্ষা বাতিলের ভাবনা চলছে বলে পর্ষদ সূত্রে খবর।