বর্ধমানের খাগড়াগড় ও বাদশাহি রোডে জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ডেরায় পাওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান পরীক্ষা করে চমকে গিয়েছিলেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা। কারণ এই সব উপাদান থেকে আরডিএক্স এবং টিএনটি (ট্রাইনাইট্রোটলুইন)-র মতো মারাত্মক বিস্ফোরকও তৈরি করা সম্ভব।
কিন্তু নাশকতা ঘটিয়ে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করা যে জঙ্গিদের লক্ষ্য, তারা কি আরডিএক্স-টিএনটি-র মতো বিস্ফোরক আদৌ তৈরি করতে পেরেছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর মেলার আগেই খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার শুরু হতে চলেছে। কারণ, ইউসুফ গাজী, কওসর ওরফে বোমারু মিজান, হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সোহেল এবং তালহা শেখের মতো জেএমবি-র চাঁইয়েরা এখনও অধরা। তদন্তকারীরা তাদের কাছেই এই প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।
বর্ধমানের খাগড়াগড়ে ২০১৪-র ২ অক্টোবরে জেএমবি-র একটি বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণ হয়ে দু’জন মারা যায়। ওই বিস্ফোরণের তদন্ত করতে নেমেই পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ঝাড়খণ্ডে জেএমবি-র ঘাঁটি গাড়ার বিষয়টি বেরিয়ে পড়ে।
খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় এনআইএ (জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা) এর আগে তিন দফায় ২৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে। এনআইএ-র আইনজীবী শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘যত শীঘ্র সম্ভব, ফের একটি চার্জশিটে আমরা দু’জনের নাম দিচ্ছি, যারা মার্চ মাসে ধরা পড়েছিল। তার পরেই চার্জ গঠন হয়ে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলার বিচার শুরু হবে।’’
গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত চার্জশিটে এনামুল মোল্লা ও হবিবুল হকের নাম থাকবে। জেএমবি-র চাঁই সন্দেহে এনআইএ ওই দু’জনকে গত ১৫ মার্চ গ্রেফতার করে। এর আগে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছিল, তারা কলকাতা থেকে দূরের জেলার বাসিন্দা। কিন্তু এনামুলের বাড়ি কলকাতার মেটিয়াবুরুজ লাগোয়া গুলজারবাদের স্লটার হাউস রোডে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা পুরসভার ওই এলাকাতেই এনামুল জেএমবি-র ঘাঁটি গেড়েছিল। আর এক ধৃত হবিবুলের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বাদুড়িয়ার আঁকিপুরের দক্ষিণপাড়ায়। খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণের কিছু দিনের মধ্যেই বাদুড়িয়ার নয়াবস্তিয়ায় জেএমবি-র একটি জেহাদি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল এই ব্যক্তি।
তবে এনামুল ও হবিবুলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২১২ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হচ্ছে, যা বাকি ২৮ জনের ক্ষেত্রে হয়নি। অর্থাৎ অভিযুক্তকে আশ্রয় দেওয়া বা লুকিয়ে রাখার অভিযোগও আনা হচ্ছে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে। কেন?
গোয়েন্দাদের দাবি, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর ইউসুফ, আবুল কালাম, হবিবুর শেখ ও কওসরের মতো পলাতক অভিযুক্তদের মেটিয়াবুরুজের কাছে নিজের ডেরায় লুকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিল এনামুল।