জেলা তৃণমূল কার্যালয়ের সামনে জন নন্দীর ভাই জয়দীপ নন্দীকে দায়িত্ব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁর অনুগামীরা।—নিজস্ব চিত্র।
বিজন ওরফে জন নন্দীর অবর্তমানে নিউ জলপাইগুড়ি এলাকা দেখভালের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে তা নিয়ে দলের মধ্যে প্রশ্ন এবং কোন্দল দুই ছিল। জন নন্দীর আকস্মিক মৃত্যুতে তা নিয়ে বিপাকে পড়ে তৃণমূল।
জন নন্দীর ভাই তথা প্রাক্তন কাউন্সিলর জয়দীপ নন্দী না জনবাবুর ছায়াসঙ্গী প্রসেনজিৎ রায়? এনজেপি’র তথা ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি এলাকার শ্রমিক সংগঠনের ক্ষমতার দখল নিয়ে দলে দুই পক্ষের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছিল। শনিবার দলের তরফে এনজেপি এলাকার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হল প্রসেনজিৎ রায়ের হাতেই। তাঁকে এনজেপি’র তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র সমস্ত ইউনিটের সভাপতি করার কথা জানানো হয়। অন্যদিকে আইএনটিটিইউসি’র ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি সাংগঠনিক ব্লকের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হল জয়দীপবাবুকে।
ভোটের মুখে দুই পক্ষকে খুশি রাখতেই জেলা নেতৃত্বকে এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে দলেরই একাংশ মনে করছে। এ দিন শিলিগুড়িতে তৃণমূলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার, যুব সভাপতি বিকাশ সরকার এবং আইএনটিটিইউসি’র জেলা সভাপতি অরূপরতন ঘোষকে সঙ্গে নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বৈঠক করেন বিদায়ী উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তার পরেই বিষয়টি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজনবাবুর অবর্তমানে দলের দায়িত্ব কাউকে দিতেই হত। কাজের সুবিধার জন্য এলাকা ভাগ করে দলের গুরুত্বপূর্ণ লোকদের দায়িত্ব দেওয়া হল।’’ তবে দায়িত্ব পেয়ে এ দিন দু’জনেই খুশি বলে জানিয়েছেন। জয়দীপবাবুর নাম ঘোষণা পর ভক্তিনগর-এনজেপি এলাকায় তাঁর সমর্থকরা মিছিল করেন। এদিকে দায়িত্ব পেয়ে দু’জনেই এলাকায় গৌতমবাবুকে জেতাতে ঝাঁপাবেন বলে জানিয়েছেন।
এর আগে এনজেপি’র তথা আইএনটিটিইউসির ব্লক সভাপতির দায়িত্ব একক ভাবে ছিল বিজন নন্দীর উপরেই। সম্প্রতি তিনি মারা গেলে এনজেপি এলাকার ক্ষমতা দখল নিয়ে তাই দলের মধ্যে কোন্দল শুরু হয়। দায়িত্ব কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে প্রসেনজিত ও জয়দীপবাবুর গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। ওই এলাকা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নিবার্চনী ক্ষেত্রের মধ্যে পড়ে। দলের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল যাতে এলাকায় নির্বাচনে প্রভাব না ফেলে সে কারণে দ্রুত দায়িত্ব বিলির প্রয়োজনও দেখা দেয়। এদিনের ঘোষণায় সেই সমস্যা মিটবে বলেই মনে করছে দলের একাংশ। তবে অপর অংশের ধারণা ‘এনজেপি’র দখল যার এলাকা তার’। তাই বিষয়টি জয়দীপবাবু আখেরে কতটা মেনে নিলেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েইছে।
যদিও এ দিন জয়দীপবাবু ব্লকের সভাপতির দায়িত্ব পেয়ে তা পালনের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘কোনও বিরোধ নেই। এসবই নিন্দুকদের মনগড়া। সবাইকে নিয়ে বিজনদার তৈরি সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করাটাই হবে আমাদের লক্ষ্য। সেই সঙ্গে নির্বাচনে জেতাটাই প্রাথমিক লক্ষ্য।’’ প্রসেনজিতবাবুও এনজেপি এলাকার দায়িত্ব পেয়ে খুশি বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আগেও বলেছি, আমি দলের বিশ্বস্ত সৈনিক। দল যা দায়িত্ব দেবে তা মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। এখন প্রথম কর্তব্য, গৌতমবাবুকে ফের বিপুল ভোটে জিতিয়ে বিধায়কের পদে আনা।’’