ইস্কোর অনুষ্ঠানে পাশাপাশি নির্বেদ রায়, ববি হাকিম ও রাহুল সিংহ। নিজস্ব চিত্র
এক দিনে একই শহরে দুই সভা। কোনওটাই রাজনৈতিক নয়। তবু তাকে কেন্দ্র করেই যেন আসন্ন পুরভোটে গা ঘামানোর প্রস্তুতি সেরে নিল আসানসোল।
রবিবার প্রথম সভাটি ছিল শহরের পোলো মাঠে। সংস্থার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধনের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর জন্য এই সভার আয়োজন করেছিল ইস্কো। ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। পরের সভাটি শহরের কাল্লা মোড়ে। রাজ্য সরকারের সেই অনুষ্ঠানে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখে না মানলেও এই দুই সভা নিয়ে কার্যত ক্ষমতা দেখানোর খেলায় নামলেন স্থানীয় তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব।
গত লোকসভা ভোটের আগে বিজেপির প্রচারে এসে এই পোলো মাঠেই জনসভা করেছিলেন মোদী। তার পরে এখান থেকে জিতে কেন্দ্রে মন্ত্রী হন বাবুল সুপ্রিয়। সেই ভোটের ফলের নিরিখে আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রে সাতটি বিধানসভা আসনের পাঁচটিতেই এগিয়ে বিজেপি। আসানসোল ও কুলটি পুরসভাতেও তৃণমূলের থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে তারা। এখন আবার ওই দু’টি-সহ আসানসোল মহকুমার চার পুরসভায় ভোট আসন্ন। এবং সে কারণেই তৃণমূলের সরকার কুলটি, রানিগঞ্জ ও জামুড়িয়া—এই তিন পুরসভাকে আসানসোলের সঙ্গে যুক্ত করে কর্পোরেশন গঠনের অজুহাতে এখানে পুরভোট পিছিয়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ বিরোধীদের। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলছে।
তবে সম্প্রতি রাজ্যের ৯২টি পুরসভার ভোটে শাসকদলের দাপট দেখার পরে বিজেপি নেতৃত্ব বুঝেছেন, আসানসোলের কর্পোরেশন দখল করা তাঁদের পক্ষে সহজ হবে না। এই পরিস্থিতিতে শহরে মোদীর আগমন যাতে দলের পালে খানিকটা হাওয়া দিয়ে যায়, সে জন্য কোমর বেঁধে নেমেছিলেন বিজেপি নেতারা। বড় জমায়েত করার জন্য গত কয়েক দিনে বারবার কর্মিসভা, নানা এলাকায় প্রচার চালিয়েছিলেন তাঁরা। এ দিন সকাল থেকেই পোলো মাঠে যাওয়ার রাস্তাগুলিতে ছিল মানুষের ঢল। গোড়ায় সভাস্থলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল আমন্ত্রণপত্র দেখে। হাজার হাজার লোক ঢুকতে না পারায় ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু হয়। বিজেপি নেতারা ইস্কো কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন। শেষমেশ সকলের জন্যই সভাস্থলের গেট খুলে দেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রায় কুড়ি হাজার লোক হয়েছিল। যাঁদের বেশির ভাগই বিজেপি কর্মী-সমর্থক। সভার মধ্যে ‘মোদী মোদী’ স্লোগানও ওঠে।
বিজেপি-র আসানসোল জেলা সভাপতি নির্মল কর্মকার বলেন, ‘‘সভায় ভিড় দেখে আমরা খুশি।’’
পক্ষান্তরে, পুরো হাওয়া যাতে বিজেপি-র পালে না যায়, সে দিকে নজর ছিল তৃণমূলেরও। কাল্লা মাঠে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ভরানোর চেষ্টা থেকেই তা পরিষ্কার। মোদীর সভামঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী হাজির থাকলেও সেখানে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের কেউ যাননি। দেখা যায়নি দলের কর্মীদেরও। তাঁরা সকলে ছিলেন কাল্লা মোড়ের সভায়। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘আমাদের উপরে কাল্লায় রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে প্রচুর জমায়েত করার নির্দেশ ছিল। আমরা সেটাই করেছি।’’ পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, এ দিন হাজার বারো লোক হয়েছিল কাল্লায়।
এর মধ্যে আবার বিতর্ক তৈরি হয়েছে ইস্কোর প্ল্যাকার্ড নিয়ে। সংস্থার আধুনিকীকরণ প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে শহর জুড়ে দেওয়া সেই সব প্ল্যাকার্ডে প্রধানমন্ত্রী-সহ বাকি অতিথিদের ছবি থাকলেও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি দেওয়া হয়নি। আসানসোলের (দক্ষিণ) তৃণমূল বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘এটা চূড়ান্ত অসৌজন্য। ইস্কো কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইব, এই অপমানের অধিকার তাঁদের কে দিয়েছে।’’ ইস্কোর আধিকারিকদের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, আসানসোলের সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘মমতার ছবি দিতে হলে তো তিনি যখন এই প্রকল্পে জমি নেওয়ার বিরোধিতা করে ধর্নামঞ্চে এসেছিলেন, সেই ছবি দিতে হত। তখন তিনি মুখ লুকোতেন কোথায়?’’ তাপসবাবুর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘এটা সিপিএমের হতাশার কথা। ওদের জানা উচিত, ১৯৯৮-এ মমতাই প্রথম ইস্কো সম্প্রসারণের দাবি তুলেছিলেন।’’