Cyclone Yaas

নদীতে নেমে বাঁধ দিয়ে গ্রাম রক্ষা দুই শিক্ষকের

গ্রামবাসীরা জানান, বুধবার ঝড় হানা দিতেই ফুঁসতে শুরু করে বিদ্যাধরী। গ্রাম ও নদীর মাঝখানের বাঁধ উপচে জল ঢুকতে থাকায় অশনি সঙ্কেত দেখেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

ফাইল চিত্র

সমাজের ভবিষ্যৎ যাঁরা, সেই ছাত্রছাত্রী গড়ার ব্রত নিয়েছেন তাঁরা। গড়ছেনও। সেই সঙ্গে বিপদে-আপদে, দুর্যোগে-দুর্বিপাকে সমাজ বাঁচানোর দায়িত্ব বহন করাটাও যে তাঁদের কর্তব্য, ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে দিশাহারা উপকূলে সেটাই দেখালেন দুই স্কুলশিক্ষক।

Advertisement

ইয়াসের প্রলয়নৃত্যের তালে তালে বাড়ছিল বিদ্যাধরী নদীর জলস্তর। ফুলে ওঠা নদীর সেই জল বাঁধ টপকে ঢুকতেও শুরু করে দিয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবা ব্লকের রাধানগর গ্রামে। স্কুলশিক্ষক বিনয় মণ্ডল ও চঞ্চল মণ্ডল ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। মহাবিপদ আসন্ন বুঝে আর কালবিলম্ব না-করে নদীবাঁধ উঁচু করতে নেমে পড়েন তাঁরা। সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন অন্য গ্রামবাসীরা। সম্মিলিত চেষ্টায় বেঁচে গিয়েছে গ্রাম। দুই শিক্ষক তামাম গ্রামবাসীকে এই শিক্ষা দিতে পেরেছেন যে, শমন যখন শিয়রে, তখন দলবদ্ধ ভাবে লড়াই চালানো ছাড়া নিজেকে এবং অন্যকে রক্ষা করার বিকল্প উপায় নেই।

গ্রামবাসীরা জানান, বুধবার ঝড় হানা দিতেই ফুঁসতে শুরু করে বিদ্যাধরী। গ্রাম ও নদীর মাঝখানের বাঁধ উপচে জল ঢুকতে থাকায় অশনি সঙ্কেত দেখেন গ্রামবাসীরা। পাশের তারানগর বিটিসি বিদ্যামন্দিরের ইতিহাসের শিক্ষক বিনয়বাবু বলেন, “বাঁধ ছাপিয়ে তখন প্রায় দেড় ফুট উঁচু জলস্রোত হামলে পড়েছে গ্রামে। আমরা কয়েক জন নদীর জলে নেমে প্রথমে বাড়িতে রাখা খড় ও মাটি দিয়ে বাঁধের কিছুটা অংশ উঁচু করতে শুরু করি। কিন্তু তাতে জল ঢোকা বন্ধ হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত বাড়িতে থাকা কালো প্লাস্টিক দিয়ে কোনও ভাবে মাটি ও খড় ঢেকে দিই। জল ঢোকা অনেকটা আটকে যায়।”

Advertisement

বিনয়বাবুর সঙ্গেই ছিলেন তাঁর বন্ধু এবং মগরাহাট হাঁসুলি হাইস্কুলের কর্মশিক্ষার শিক্ষক চঞ্চলবাবু। তিনিও গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। চঞ্চলবাবু বলেন, “নদীতে জোয়ার ছিল প্রায় তিন ঘণ্টা। বৃষ্টির মধ্যে জোরে হাওয়া দিচ্ছিল। আমরা নদীর বুকজলে দাঁড়িয়ে বাঁধ তৈরির চেষ্টা করছিলাম। শুধু আমি আর বিনয় নই, গ্রামবাসীরা সবাই মিলে এটা করেছি। গ্রামের মহিলারাও এগিয়ে এসেছিলেন।’’

গ্রামবাসীদের একাংশ জানান, ঘণ্টা তিনেক প্রচণ্ড ঠান্ডা হাওয়ায় এক বুক জলে দাঁড়িয়ে, গ্রামবাসীদের নিয়ে বাঁধ রক্ষার কাজ করেছেন দুই শিক্ষক। গ্রামবাসীদের নিয়ে ওই দুই শিক্ষকের গ্রামকে প্লাবন থেকে বাঁচানোর ঘটনায় অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্যান্য শিক্ষক ও বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনও। একটি শিক্ষক সংগঠনের নেতা চন্দন মাইতি বলেন, “বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এখন বহু শিক্ষকই এগিয়ে আসছেন। তবে ওই দুই শিক্ষক ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যে যে-ভাবে নদীর জলে নেমে বাঁধকে রক্ষা করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।” অন্য এক শিক্ষক নেতা চন্দন গড়াই বলেন, “অনেক শিক্ষকই নানা ভাবে ঘূর্ণিঝড়ে মানুষের পাশে রয়েছেন। তবে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে ওই দুই শিক্ষক যে-ভাবে গ্রাম বাঁচালেন, তাতে তাঁদের কুর্নিশ জানাতেই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন