Scam

অ্যাডমিট আর মার্কশিট ভুয়ো, অভিযুক্ত ‘নেতা’

Advertisement

সুস্মিত হালদার, অমিত মণ্ডল

কৃষ্ণনগর ও কল্যাণী  শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২২ ০৬:২৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলেজে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা টাকা নিয়ে জালিয়াতি এবং জাল অ্যাডমিট কার্ড ও মার্কশিট দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি-র দুই নেতার বিরুদ্ধে। এঁদের এক জন সুজয় হালদার টিএমসিপি-র কৃষ্ণনগর শহর কমিটির সভাপতি ছিলেন। রাজাগোপাল পাল নামে আর এক জন ছিলেন সাধারণ সম্পাদক। যদিও টিএমসিপি-র কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা নেতৃত্বের দাবি, সাত মাস আগেই তাঁদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মঙ্গলবার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের ইংরেজির ছাত্রী তানিয়া ঘোষ নদিয়ার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামকের কাছে লিখিত অভিযোগে জানান, তিনি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। স্নাতক স্তরের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষার সময়ে তিনি কলেজ থেকে অ্যাডমিট কার্ড পাননি। পরে জানতে পারেন, সুজয় তা তুলে নিয়েছেন। বারবার চাওয়ার পর পরীক্ষার আগের রাতে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাঁর বাড়িতে গিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দিয়ে আসেন সুজয়। সেই পরীক্ষার ফল ‘রিভিউ’ করতে দেন তিনি। সুজয় তাঁর হোয়াটসঅ্যাপে মার্কশিটের ছবি পাঠিয়ে দেন। ষষ্ঠ সিমেস্টারের দিনও সুজয় তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে অ্যাডমিট কার্ড পাঠান। সেটি তিনি পরীক্ষার খাতার সঙ্গে জমা দিয়েছিলেন। ফল বেরোনোর আগে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফোন করে কলেজে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সেখানে গিয়েই তিনি জানতে পারেন, ওই সব অ্যাডমিট কার্ড এবং মার্কশিট ভুয়ো। এই সব গোলমলে তাঁর রেজিস্ট্রেশন ইতিমধ্যে বাতিল হয়ে গিয়েছে।

এ দিন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাসমূহের নিয়ামক বিমলেন্দু বিশ্বাস বলেন, “রেজিস্ট্রারের বিভাগে ওই অভিযোগ পাঠিয়ে দিয়েছি। অমিত বিশ্বাস নামে এক ছাত্রও কোতয়ালি থানায় একই ধরনের অভিযোগ করেছেন। তারা এই বিষয়ে জানতে চেয়ে আমাদের চিঠি দিয়েছে।”

Advertisement

নদিয়ারই ভাতজাংলা এলাকার বাসিন্দা অমিত বিশ্বাস সুজয় ও রাজাগোপালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, ২০২০ সালে রাজাগোপাল তাঁকে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে পাস কোর্সে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার নাম করে ২০ হাজার টাকা নেন।

এর পর দুটো সিমেস্টারের আগে রেজিস্ট্রেশন বাবদ ১৩০০ টাকা করে নিয়েছেন এবং অ্যাডমিট কার্ড দিয়েছেন। পরে দেখা যায়, সেগুলি জাল। দু’বছর পর খোঁজ নিয়ে অমিত জানতে পারেন, তাঁকে ভর্তিই করা হয়নি। পুরোটাই ভুয়ো। তাঁর আক্ষেপ, “আমরা জীবনটাই ওরা নষ্ট করে দিল।” তানিয়ার দাবি, “এই জালিয়াতির শাস্তি চাই।”

যদিও তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা এই সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সুজয় এবং রাজাগোপাল। সুজয়ের দাবি, “এ রকম কোনও ঘটনাই ঘটেনি। চক্রান্ত করে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে।” আর টিএমসিপি-র কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সম্রাট পাল বলছেন, “যাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠছে তাদের সঙ্গে সংগঠনের কোনও সম্পর্ক নেই। অনেক আগেই সমস্ত দায়িত্ব থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক শোভন নিয়োগীকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি প্রতি বারই তা কেটে দিয়েছেন। কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার ঈশানী পাল বলেন, “তদন্ত হচ্ছে। প্রয়োজনে পদক্ষেপ করা হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন