এটিএম থেকে টাকা উধাও কোন পথে, রহস্য ঘনাচ্ছে

রহস্যের কেন্দ্রে একটি এটিএম মেশিন। আপাতত সেই বাক্স-রহস্য ভেদে উঠেপড়ে লেগেছেন ইউকো ব্যাঙ্কের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অফিসার ও পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার সকালে ওই এটিএম-টিতে সাধারণের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। রহস্যের সূত্রপাত শনিবার রাতে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:১২
Share:

রহস্যের কেন্দ্রে একটি এটিএম মেশিন। আপাতত সেই বাক্স-রহস্য ভেদে উঠেপড়ে লেগেছেন ইউকো ব্যাঙ্কের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অফিসার ও পুলিশ। তদন্তের স্বার্থে মঙ্গলবার সকালে ওই এটিএম-টিতে সাধারণের ঢোকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

রহস্যের সূত্রপাত শনিবার রাতে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকে রবিবার রাত পর্যন্ত মধ্যমগ্রামের জনা দশেক ব্যক্তির মোবাইলে এসএমএস আসে, তাঁদের টাকা এটিএম থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। তাঁদের বেশির ভাগই ইউকো ব্যাঙ্কের মধ্যমগ্রাম শাখার গ্রাহক। অন্যদের মধ্যে রয়েছেন এসবিআই এবং সিটি ব্যাঙ্কের গ্রাহকও। দফায় দফায় তাঁদের টাকা তোলা হয়েছে কলকাতার বিভিন্ন এলাকার এটিএম থেকে। অবাক করা এই কাণ্ড জানিয়ে ওই গ্রাহকেরা সোমবার দ্বারস্থ হন মধ্যমগ্রাম থানায়। জানানো হয় ইউকো ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে। তদন্ত শুরু হতে জানা যায়, এই সব গ্রাহক সবাই গত এক সপ্তাহের মধ্যে কোনও না কোনও সময়ে মধ্যমগ্রাম ইউকো ব্যাঙ্কের লাগোয়া এটিএম থেকে টাকা তুলেছিলেন। এসবিআই এবং সিটি ব্যাঙ্কের যে গ্রাহকদের টাকা গায়েব হয়েছে, তাঁরাও ওই সময়ের মধ্যে ওই এটিএম-টি ব্যবহার করেছিলেন। এ থেকেই তদন্তকারীদের ধারণা, রহস্যের যাবতীয় সূত্র লুকিয়ে রয়েছে ওই মেশিনটির মধ্যেই। পুলিশের এক অফিসার এ দিন বলেন, ‘‘সব তদন্তের কেন্দ্রে এখন ওই যন্ত্রটিই। তাই এর সূত্র ধরেই অপরাধীদের কাছে পৌঁছতে হবে।’’

কী ভাবে ওই অপরাধ হতে পারে?

Advertisement

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই এটিএমে গোপন ক্যামেরা রেখে ব্যবহারকারীদের এটিএম কার্ডের নম্বর, পিন নম্বর জেনে নেওয়া হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়াও এটিএম মেশিনে যেখানে কার্ড পাঞ্চ করা হয়, সেখানে নকল কার্ড রিডার রেখে গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য জানার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এর পাশাপাশি ওই যন্ত্রে কার্ডের মাধ্যমে ভাইরাস ঢুকিয়ে গ্রাহকদের তথ্য চুরি করা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী এ দিন বলেন, ‘‘অভিযোগ মোতাবেক তদন্ত চলছে। সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

পড়ুন: এসএমএসে জানা গেল, গায়েব টাকা

পুলিশের পাশাপাশি ইউকো ব্যাঙ্কের তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের অফিসারেরাও ঘটনার তদন্ত শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন ইউকো ব্যাঙ্কের এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর জে কে গর্গ। এ দিন তদন্তকারী অফিসারেরা ইউকো ব্যাঙ্কের ওই এটিএমটি-র সাম্প্রতিক কালের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন। এটিএম-এ কর্মরত রক্ষীদেরও জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। একই সঙ্গে এ দিন প্রতারিত গ্রাহকদের সমস্ত নথিপত্র সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, প্রতারিত গ্রাহকদের মোবাইলে আসা এসএমএস-এর সূত্র ধরে যে সব এলাকার এটিএম থেকে টাকা তোলা হয়েছে সেই এটিএমগুলির সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইউকো ব্যাঙ্কের জেনারেল ম্যানেজার (তথ্যপ্রযুক্তি) অতুল সিংহ জানিয়েছেন, প্রতারিতদের অভিযোগ অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। এই অপরাধের কিনারা না করতে পারলে যে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপদ ঘটতে পারে তা-ও জানিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্তারা।

তদন্তকারীদের বক্তব্য, যে ভাবেই এই অপরাধ করা হোক না কেন, তা করেছে উন্নত প্রযুক্তির সাহায্য নিয়েই। অপরাধীরা এই সব গ্রাহকের সব তথ্য নিয়ে হুবহু নকল কার্ড (ক্লোন) তৈরি করে তা দিয়ে বিভিন্ন এটিএমে ঢুকে টাকা তুলেছে। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, যারা এত আটঘাট বেঁধে কাজে নেমেছে, এটিএমের সিসিটিভির ফুটেজে তাদের ছবি পাওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে। বিশেষ করে এই সময়ে শীতবস্ত্রে মুখ ঢেকে এটিএম ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে।

অপরাধীরা যে ভাবেই এই কাজ করুক না কেন, সে জন্য ব্যাঙ্কের উপরে ভরসা রেখে গ্রাহকেরা যে টাকা খোয়ালেন তার দায় কে নেবে?

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক কর্তা বলেন, এ রকম ঘটনা ঘটলে তার দায় গ্রাহকদের নয়। এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে, এ সব ক্ষেত্রে সং‌শ্লিষ্ট ব্যাঙ্ককেই এর দায় নিতে হবে। ইউকো ব্যাঙ্কের তরফেও মঙ্গলবার জানানো হয়েছে, তদন্তে তাদের গাফিলতি প্রমাণিত হলে প্রতারিত গ্রাহকদের সব টাকা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। প্রতারিত এক বৃদ্ধা সুতপা মুখোপাধ্যায়ের ছেলে রুদ্রদীপ এ দিন বলেন, ‘‘আমরা এ দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে সমস্ত নথিপত্র জমা দিয়েছি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন, আমাদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন