একই বিষয়ে যত বার খুশি পরীক্ষা দিন! ত্রুটি শোধরাতে সংস্কার

দু’তিন বারের বেশি কেউ একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন না, এমন ব্যবস্থার দিন শেষ হতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ বার এমন বন্দোবস্ত চাইছে, যাতে পরীক্ষার্থীরা চিন্তামু্ক্ত হতে পারেন।

Advertisement

মধুমিতা দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৫:০১
Share:

দু’তিন বারের বেশি কেউ একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে পারবেন না, এমন ব্যবস্থার দিন শেষ হতে চলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ বার এমন বন্দোবস্ত চাইছে, যাতে পরীক্ষার্থীরা চিন্তামু্ক্ত হতে পারেন। পরীক্ষার্থী যখন সম্পূর্ণ ভাবে প্রস্তুত হবেন, তখনই যেন পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। সকলকেই একসঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে, প্রস্তাবিত পরীক্ষা-পদ্ধতি এই ধারণাটাই বদলে দেবে বলে মনে করছে শিক্ষা শিবির। এই পদ্ধতিতে পরীক্ষার্থী একই বিষয়ে যত বার চাইবেন, বসতে পারবেন পরীক্ষায়।

Advertisement

উচ্চশিক্ষায় পরীক্ষা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে ইউজিসি। প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন পদ্ধতি তৈরির জন্য একটি ‘ডিসকাশন পেপার’ বা আলোচনাপত্র প্রকাশ করেছে তারা। নতুন পরীক্ষা-পদ্ধতি কেন দরকার, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সেই পেপারে বর্তমান পরীক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটি তুলে ধরা হয়েছে। সেই ত্রুটি থেকে কী ভাবে বেরোনো যায়, তার সুপারিশ করা হয়েছে বিস্তারিত ভাবে।

কয়েক মাস আগেই এই বিষয়ে শিক্ষক, ছাত্র, শিক্ষাবিদ ও অন্যদের মতামত চেয়েছিল ইউজিসি। তার ভিত্তিতে এবং বিশেষজ্ঞ কমিটির সঙ্গে আলোচনাক্রমে প্রকাশ করা হয়েছে এই আলোচনাপত্র। তাতে বলা হয়েছে: দেশের পরীক্ষা পদ্ধতিতে খামতি রয়েছে। নম্বর দেওয়ার পদ্ধতিতে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠছে বারবার। উঠছে অস্বচ্ছতার অভিযোগও। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ফলপ্রকাশে দেরি হয়। জালিয়াতিও হয় ফলপ্রকাশে। এতে ফল ঘোষণার প্রক্রিয়াই কলঙ্কিত হচ্ছে।

Advertisement

এর থেকে বেরিয়ে আসার কথা বলা হয়েছে আলোচনাপত্রে। পরীক্ষা নিয়ে পড়ুয়ারা যাতে চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন, তার জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে প্রযুক্তিনির্ভর ‘অন ডিমান্ড’ পরীক্ষার কথা। এতে পরীক্ষার্থী তাঁর প্রস্তুতি সম্পর্কে সন্তুষ্ট হলে তখনই পরীক্ষায় বসতে পারবেন। পরীক্ষা শেষের পরেই ফল জানিয়ে দেওয়া হবে। কোনও বিষয়ের নম্বর নিয়ে পড়ুয়াদের যদি কোনও বক্তব্য থাকে, কর্তৃপক্ষকে তা শুনতে হবে। পড়ুয়া উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়ন চাইলে তারও ব্যবস্থা করতে হবে। পড়ুয়ারা নিজেদের পরীক্ষার নম্বর নিয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট সিমেস্টারের ফল প্রকাশ করা যাবে না।

খাতা দেখার চালু পদ্ধতিরও সমালোচনা করা হয়েছে আলোচনাপত্রে। প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একই পদ্ধতিতে ‘গ্রেডিং’-এর সুপারিশ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ফলপ্রকাশ, মার্কশিটে স্বচ্ছতার উপরে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ডিসকাশন পেপারে। ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিক ডিপোজিটরি’ অর্থাৎ ন্যাড-এ প্রত্যেক পড়ুয়ার মার্কশিট, শংসাপত্র রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করা হয়েছে তাতে। ‘ব্লকচেন’ প্রযুক্তিতে এই সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়েছে।

তবে স্নাতক স্তরে ভর্তি ক্ষেত্রে ‘কমন এবিলিটি টেস্ট’ না-নেওয়ার পক্ষেই সওয়াল করা হয়েছে ডিসকাশন পেপারে। বলা হয়েছে, স্নাতকোত্তর স্তরে এই পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে পরীক্ষা নিলে পড়ুয়াদের চাপ কমবে বলেই মত প্রকাশ করা হয়েছে আলোচনাপত্রে।

এই আলোচনাপত্র পড়ে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা পদ্ধতির সঙ্গে জড়িত সকলকে নিজেদের মতামত ইউজিসি-র কাছে পাঠিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন