Russia-Ukraine Crisis

Ukraine Crisis: কলেজের বেসমেন্ট এখন বাঙ্কার, ‘রুটির ঝুড়ি’ ইউক্রেনে বিস্কুট খেয়ে কাটাতে হচ্ছে দিন

ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন কোচবিহারের বাবুরহাট এলাকার বাসিন্দা সৌরভ বর্মণ। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সৌরভ এখন বন্ধুদের সঙ্গে আটকে পড়েছেন খারকীভ এলাকায়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৯:৫৮
Share:

ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা। — ফাইল চিত্র

চিকিৎসক হয়ে ফিরে আসবেন এ দেশে। এক বুক আশা নিয়ে অনেকেই পা রেখেছিলেন ইউক্রেনে। ভর্তি হয়েছিলেন সেখানকার বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে। কিন্তু রুশ সেনার অভিযান আচমকা ধাক্কা দিল সব পরিকল্পনায়।
কৃষিসম্পদে ভরপুর ইউক্রেন। এক সময় বলা হত, সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘রুটির ঝুড়ি’। কালো মাটির সেই দেশে এখন বইছে রক্তের ধারা। যত সময় গড়াচ্ছে ততই ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে আতঙ্কের ছায়া গভীর হচ্ছে এ রাজ্যে। ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন কোচবিহারের বাবুরহাট এলাকার বাসিন্দা সৌরভ বর্মণ। সেখানকার মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র সৌরভ এখন বন্ধুদের সঙ্গে আটকে পড়েছেন খারকীভ এলাকায়। সেখান থেকে সৌরভ জানিয়েছেন, যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে কেটে দেওয়া হয়েছে জলের সংযোগ। দেখা দিয়েছে পানীয় জলের সঙ্কট। খারকীভ থেকে সৌরভ জানিয়েছেন, তাঁর কাছে আপাতত মজুত মাত্র ১০ লিটার জল। খাবার বলতে শুকনো রুটি এবং বিস্কুট। তাই খেয়েই দিন কাটছে তাঁদের। সাইরেন বাজলেই তাঁদের আশ্রয় নিতে হচ্ছে বাঙ্কারে।

Advertisement

সৌরভের বাবা জিতেন্দ্রনাথ বর্মণের কথায়, ‘‘রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সময় থেকেই ওকে বাড়ি ফিরে আসার জন্য বলছিলাম। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ থেকে কোনও গাইডলাইন দেওয়া হয়নি। তাই কেরিয়ারের স্বার্থেই থেকে যায় ও। এখন কী ভাবে সৌরভ বাড়ি ফিরবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে আমাদের।’’

ডাক্তারি পড়তে গিয়ে খারকীভেই আটকে পড়েছেন বাঁকুড়া শহরের উত্তর প্রণবানন্দপল্লির বাসিন্দা সৌমাল্য মুখোপাধ্যায়। সৌমাল্যর বাবা উত্তম মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ছেলে-সহ অন্যান্য পড়ুয়ারা আশ্রয় নিয়েছে বাঙ্কারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল থেকে বাঙ্কারে খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সেখান থেকে বাইরে বেরোলে তবেই তার সঙ্গে ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে।’’

Advertisement

ইউক্রেনের জাপোরিজঝিয়া শহরের স্টেট মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির ছাত্রী হুগলির কোন্নগরের নবগ্রামের ছাত্রী দত্ত। একরাশ দুশ্চিন্তা নিয়ে প্রেরণার মামা স্বস্তিক দত্ত বলছেন, ‘‘শুক্রবার রাতের পর ওর সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারিনি। রোমানিয়া হয়ে ওদের ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তবে প্রেরণা যেখানে আছে সেখান থেকে রোমানিয়া সীমান্ত প্রায় ১৫ ঘন্টা দূরে।’’ প্রেরণার পাঠানো ভিডিয়ো বার্তায় তাঁর পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরেছেন, আপাতত কলেজ হস্টেলের বেসমেন্টেই তৈরি করা হয়েছে বাঙ্কার। বিপদ বুঝলে সেখানে চলে যেতে হচ্ছে। প্রেরণা ইউক্রেনের ভয়াবহ পরিস্থিতির বর্ণনা দিতে গিয়ে জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরু হতেই সেখানে বন্ধ হয়েছে এটিএম। তাঁদের হাতে নগদ টাকা প্রায় শেষ। এমন পরিস্থিতিতে সেখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে অনলাইন লেনদেনও। তবে এই অবস্থাতেও আশা ছাড়ছেন না তিনি। বাড়িতে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকারের তরফে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফোন করে তার খোঁজ নিয়েছেন, ডায়মন্ডহারবার সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রেরণার আশা, খুব তাড়াতাড়ি পা রাখবেন দেশের মাটিতে।

ইউক্রেনের পলটোভা শহরে কম্পিউটার সায়েন্স এবং সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে আটকে পড়েছেন পূর্ব বর্ধমানের রায়না এবং নম্বর পঞ্চায়েতের নারায়ণদীঘি এলাকার বাসিন্দা রোহিত ভকত। ঘোর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন ভকত পরিবার। চেষ্টা করেছিলেন হাঙ্গেরি সীমান্ত পেরিয়ে ইউক্রেন থেকে বেরিয়ে আসার। কিন্তু রাস্তা বন্ধ থাকায় ফিরে আসতে হয়েছে রোহিতকে। কোনও একটা রাস্তা নিশ্চয় পাওয়া যাবে, এই আশায় রয়েছে ভকত পরিবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন