এ ছবি ধরা পড়ল সর্বত্রই। লিলুয়ার একটি বুথে রণজিত নন্দীর তোলা ছবি।
ফিরে এল ২০০৪-এর অভিজ্ঞতা। আবারও প্রমাণ হল শাসকদলের তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গে অবাধ ভোট আকাশকুসুম কল্পনা মাত্র।
মনে দ্বিধা ছিল। ২০০৪-এর পুরভোটের অভিজ্ঞতা খুবই খারাপ। তবুও বেরিয়ে ছিলাম। তখন অবশ্য রাজারহাট-গোপালপুর আলাদা পুরসভা। এ বার সল্টলেকের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে নতুন বিধাননগর পুর-নিগম। সেই নিগমের প্রথম ভোটে অংশ নেওয়ার জন্য ভিতরে একটা তাড়না কাজ করছিল। তাই বেরিয়ে পড়লাম।
বুথ কোথায় জানতাম। স্থানীয় কিশলয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্তু পার্ট-নম্বর মনে ছিল না। বাড়িতে ভোটার স্লিপও আসেনি। তাই হাতে একটু সময় নিয়েই বেরিয়েছিলাম। তার আগে টিভিতে পুরভোটের খবর দেখে মনে শঙ্কার মেঘ জমেছিল। মুখ চেনার দৌলতে ভোটার স্লিপ পেতেও দেরি হয়নি। স্কুলের সামনে দেখলাম ভিড়ও বেশি নেই। তবে স্কুলের আশপাশের গলির ভিতরে ভালই ভিড়। চেনার থেকে অচেনা মুখই বেশি। কয়েক জনের হাতে বেশ কয়েকটি ভোটার স্লিপ। এক জনকে দেখলাম তুলোয় কিছু লাগিয়ে আঙুলে ঘষছে। তবে কোনও উত্তেজনার চিহ্ন দেখলাম না।
বিধাননগরের ভোটে পুলিশের ভূমিকা নীরব দর্শকের
প্রার্থী না প্রতীক, কাকে বাছলেন তাপস ঘরণী গোপা?
সাংবাদিকদের বেধড়ক পেটাল তৃণমূলের গুন্ডারা
এ কেমন ভোট! এরা কারা সল্টলেকে?
বহিরাগত তাণ্ডব, অবাধে ভোট লুঠল শাসক দল
স্কুল গেটের মুখে দু’জন বন্দুকধারী পুলিশ বসে আছে। ঢুকে দেখলাম আর এক জন ঘুরে বেরাচ্ছে। পার্ট-নম্বরের লাইন কোথায় জিজ্ঞাসা করাতে হেসে বললেন, ‘‘নিজেই খুঁজে নিন।’’ কয়েক জনকে জিজ্ঞাসা করে সহজেই লাইনও পেয়ে গেলাম। খুবই ছোট লাইন। গত লোকসভা ভোটে এই স্কুলেই প্রায় দু’ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছিলাম। গরমে নিদারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। লাইন দেখে মনটা খুশি হয়ে গেল।
এ বার লাইন লোকসভা ভোটের থেকে অনেক অনেক কম। কিন্তু এর পরেই খটকা লাগার শুরু। প্রথমেই খটকা লাগল বুথের মুখে। পুলিশ নয়, লাইন নিয়ন্ত্রণ করছে একটি ছেলে। পাশে এক জন বন্দুকধারী পুলিশকর্মীর কাজ শুধু দাঁড়িয়ে থাকা। লাইনে দাঁড়ানো লোকজনের সঙ্গে ছেলেটির ইয়ার্কি, ঠাট্টা শুনে মালুম হল স্থানীয়। আর রাজনৈতিক পরিচয় বলাই বাহুল্য। এতই ছোট লাইন যে মিনিট দশেকের ভিতরে বুথের একেবারে মুখে চলে এলাম। এ বার নজর গেল বুথের ভিতরে। এ বার আসল ধাক্কা খেলাম। ইভিএম-এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে অন্য একটি ছেলে। আমার আগে যাঁরা ভোট দিতে ঢুকলেন প্রত্যেকের ভোট দেওয়ার সময়ে পাশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এক জনের ক্ষেত্রে তো নিজেই বোতাম টিপে দিল। কী হতে চলেছে আন্দাজ করতে বাকি রইল না।
ঘরের মুখে লাঠিধারী বয়স্ক পুলিশকর্মী। আমাকে দেখে যেন কথা বলার ইচ্ছে হল। খুব নিচু গলায় বললেন, ‘‘গণতন্ত্র চলছে! ১৫ বছর রাষ্ট্রপতির শাসন করে দিতে হবে।’’ বুথের ভিতরে সিপিএমের এজেন্ট অনেক দিনের পরিচিত। পরিবারের খবরও নিল। আর অসহায় মুখে বলল, ‘‘দেখ, কোথায় আর ভোট দেবে।’’ আঙুলে কালি লাগাতে লাগাতে শুনতে পেলাম বুথের ভিতরে থাকা ছেলেটি এক জনের উদ্দেশ্য বলছে, ‘‘এই তুই কালি লাগাস না, তোর পরে কাজ আছে।’’
কালি লাগিয়ে এগিয়ে গেলাম ইভিএম-এর দিকে। পরমাত্মীয়ের মতো ছেলেটি কাছে এসে দাঁড়াল। দেখলাম কোনও ‘নোটা’র বোতাম নেই। তবে থাকলেও কিছু করার ছিল না। ছেলেটি বলল, ‘‘ওই বোতামটা টিপে দিন।’’ তার গরম নিশ্বাসে হাত আর অন্য কোনও বোতাম ছুঁতে সাহস পেল না। শাসক দলের ঝুলিতে আরও একটি ভোট জমা পড়ল। ২০০৪-এ একই ভাবে ব্যালটে ছাপ মারতে বলে ছিল। শুধু রংটাই যা আলাদা ছিল।