২১ জুলাইয়ের সভার আগে প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
২১ জুলাইয়ের সভা নিয়ে সতর্ক তৃণমূল। আরও বেশি সতর্ক পুলিশ।
মূলত দু’টি কারণ। প্রথমত, যুব তৃণমূলের শহিদ দিবসের এ বছর ২৫ বছর। আর দ্বিতীয় কারণটি মেদিনীপুরে সদ্য ঘটে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভায় ছাউনি ভেঙে যাওয়া। এই দুয়ের ফলে, ২১ জুলাইয়ের মঞ্চ থেকে নিরাপত্তা— সবেতেই অতিরিক্ত সতর্ক তৃণমূল, সতর্ক পুলিশও।
শহিদ দিবসের ২৫ বছর বলে অন্যান্য বারের থেকে এ বার ভিড় অনেকটাই বাড়বে বলে আশা তৃণমূলের। সংখ্যাটা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাই এবার আর শুধু মঞ্চের আশেপাশে বা দর্শকদের দিকে নয়, সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে মঞ্চের তলাতেও। পুলিশের পরামর্শ মেনে, দর্শকদের থেকে দূরত্ব বাড়াতে শুরুতেই অন্য বছরের তুলনায় আট ফুট পিছিয়েও দেওয়া হয়েছে মূল মঞ্চ।মঞ্চ তৈরিতেও নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ঠিক কী রকম হচ্ছে এ বারের মঞ্চ?
অনেকটা খেলার মাঠের গ্যালারির মতো তৈরি হচ্ছে চারটি স্তরে মূল মঞ্চ। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষণ দেওয়ার বর্গাকার ডায়াস অন্য বছরের মতো এবারও সবচেয়ে উঁচুতে। তার পেছনে তিনটি স্তরে বাকিদের বসার জায়গা। পূর্ত দফতর ও পুলিশ সূত্রে খবর, মঞ্চ এমন ভাবে বানানো হচ্ছে যাতে এক হাজার মানুষ মঞ্চে উঠে পড়লেও কোনও ক্ষতি হবে না।
আরও পড়ুন: লোকায়ুক্তে মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড়় দিতে আইন সংশোধন করবে রাজ্য
মুখ্যমন্ত্রী এবং শীর্ষ তৃণমূল নেতাদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই এবার বিশেষ সতর্কতা হিসেবে লোহার পাইপের কাঠামোর সঙ্গে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশের বাঁধুনি। যে ডেকরেটর সংস্থা মঞ্চ গড়ার বরাত পেয়েছে, তারা জানিয়েছে, প্রায় ৪০০ লোহার পাইপ এবং ৮০০ বাঁশ ব্যবহার করা হয়েছে গোটা মঞ্চ তৈরি করতে।
এবার আর শুধু মঞ্চের আশেপাশে বা দর্শকদের দিকে নয়, সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে মঞ্চের তলাতেও। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
কলকাতা পুলিশের পরামর্শ মতো ১০০টির বেশি সিসি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে সভাস্থলে। তার মধ্যে বেশ কযেকটি লাগানো হচ্ছে মঞ্চের তলাতেও। রাজ্য গোয়েন্দা দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই মঞ্চ আট ফুট পিছিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।সোমবার সন্ধ্যায় তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী সভাস্থলে এসে মঞ্চ পিছিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। সূ্ত্রের খবর, আগে যেখানে মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছিল, সেখান থেকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট এবং চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলের দূরত্ব এতটাই কম যে, সেটা নিরাপত্তাজনিত সমস্যা তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: বিজেপিরই ছায়া তৃণমূলে, বিঁধলেন এ বার কারাট
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্য বছরের মতো এ বছরও বড় মিছিলগুলি সভাস্থলে পৌঁছবে শিয়ালদহ স্টেশন, হাওড়া স্টেশন, শ্যামবাজার, হেস্টিংস, হাজরা এবংগিরিশপার্ক থেকে।দূরের জেলাগুলি থেকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক হাজার তৃণমূল সমর্থক কলকাতায় পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁদের জন্য বাইপাসের কাছে মিলনমেলা, আলিপুরের উত্তীর্ণ স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র-সহ মধ্য ও উত্তর কলকাতার একাধিক ধর্মশালায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, ২১ তারিখের জন্য প্রায় ২ হাজার ৭০০ অতিরিক্ত পুলিশকর্মীকে মোতায়েন করা হবে। সভাস্থল এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকবেন তিন জন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার,আটজন যুগ্ম কমিশনার এবং২০ জন ডেপুটি কমিশনার।বৃহস্পতিবারই কলকাতার পুলিশ কমিশনার জানিয়ে দিয়েছেন, শুক্রবার মধ্যরাতের পর থেকেই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলের আশেপাশে, হেস্টিংস থেকে ক্যাথিড্রাল রোডের মাঝখানে এজেসি বোস রোড, হসপিটাল রোড, ক্যাসুরিনা অ্যাভিনিউ, কুইন্সওয়ে, লাভার্স লেনে কোনও রকম যানবাহন পার্কিং নিষিদ্ধ। ওই জায়গাতেই শনিবার তৃণমূল সমর্থকদের বাস ও গাড়ি রাখা হবে। সেখান থেকে তাঁরা মিছিল করে আসবেন। সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণ করতে সভাস্থল ছাড়াও শহরে প্রায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবক থাকবেন।কলকাতা, শিয়ালদহ এবং হাওড়া স্টেশনে বিশেষ ক্যাম্প করা হয়েছে তৃণমূলের তরফ থেকে।
মেট্রো কর্তৃপক্ষর ধারণা, এবার মেট্রোতেও প্রচুর তৃণমূল কর্মী পৌঁছনোর চেষ্টা করবেন ধর্মতলায়। তাই ভিড় সামাল দিতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত আরপিএফ কর্মী মোতায়েন করা হবে বলে জানা গিয়েছে। দুপুর ১২টায় সভা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, সকাল ন’টার পর থেকেই মধ্য কলকাতায় যান চলাচল শ্লথ হয়ে যাবে। আর সভা শুরু হয়ে যাওয়ার পর গোটা মধ্য কলকাতায় যান চলাচল স্তব্ধ থাকবে—আগাম সতর্ক করছেন ট্রাফিক পুলিশ কর্তাদের একাংশই। সভা মিটে যাওয়ার পর দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করাই শনিবার কলকাতা পুলিশের চ্যালেঞ্জ।