মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালানোর প্রবণতায় রাশ টানতে এ বার নতুন ধারা যুক্ত করল উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ। পুলিশের দাবি, তাতে ফলও মিলেছে হাতেনাতে। দৈনিক গড়ে আটক হচ্ছে ২০টি করে মোবাইল। তাতে ওই অপরাধের প্রবণতাও কমছে বলে দাবি পুলিশের।
মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি বা মোটরসাইকেল চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে ১০০টাকা জরিমানা দিতে হবে, তবেই মিলবে ছাড়। এটাই ছিল ট্রাফিকের নিয়ম। গোটা রাজ্যে এবং কলকাতা পুলিশেও এই একই নিয়ম চালু রয়েছে। ওই নিয়মে ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর ১০০ টাকা দিয়ে রেহাই পেয়ে যেতেন চালকেরা। জরিমানার টাকার পরিমাণ কম বলে তেমন গায়েও লাগত না। মোবাইল নিয়ে নেওয়ার সুযোগও ছিল না। ফলে টাকা দিয়ে ছাড় মিলে যাওয়ায় অপরাধের প্রবণতা কমছিল না।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭৯ ধারায় রয়েছে বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালালে আদালতে বিচারের পরে চালকের জেল ও জরিমানা দুই হতে পারে। সেই ধারাই মোবাইল কানে দিয়ে গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রেও জুড়ে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা পুলিশ। ফলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালালে হ্যান্ডসেটটি বাজেয়াপ্ত করতে পারছে পুলিশ। আর তাতেই সমস্যায় পড়ছেন চালকেরা। কারণ, মোবাইলটি ছাড়াতে থানায় নয়, আদালতের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে চালকদের। আদালতে প্রথমে আপিল, পরে বিচার শেষে মোবাইল পেতে বেশ কয়েক দিন লেগে যাচ্ছে। আর মোবাইল কয়েক দিন না থাকায় বিপাকে পড়ছেন চালকেরা। আরও সমস্যা হল, সিম লক করে নতুন সিম নিতে গেলেও দ্বারস্থ হতে হচ্ছে সেই পুলিশেরই।
ওই ধারা যুক্ত করার পরে গত ৮ দিনে উত্তর ২৪ পরগনায় ১৬০টি মোবাইল আটক করেছে পুলিশ। সব ক’টি ক্ষেত্রেই ২৭৯ ধারায় মামলাও করা হয়েছে। মোবাইল কানে গাড়ি চালানো বিপজ্জনক ভাবে গাড়ি চালানো বলেই মনে করছে পুলিশ। কারণ কানে ফোন থাকায় চালকের মনঃসংযোগ নষ্ট হয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে। এ রকম দুর্ঘটনার নজিরও রয়েছে ভুরি ভুরি। ফলে, আর ওই ধারা যুক্ত করতে কোনও সমস্যা থাকছে না বলে দাবি পুলিশের।
উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আগে এমনও অনেক বার দেখা গিয়েছে যে, একই ব্যক্তি মোবাইল কানে দিয়ে গাড়ি চালানোর দায়ে একাধিক বার ধরা পড়েছেন কিন্তু শোধরানোর চেষ্টা করেননি। মোবাইল নিয়ে নেওয়ার পরে আশা করা যায় তাঁরা আর কখনও ওই অপরাধ করবেন না। আর বিষয়টি প্রচার হলে ওই অপরাধের প্রবণতা কমবেও।’’ ইতিমধ্যেই প্রথম দিনের তুলনায় পরবর্তীতে বাজেয়াপ্ত করা মোবাইলের সংখ্যাটা কমছে বলেই জানিয়েছে পুলিশ। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনও হয় যে হঠাৎ করেই বিশেষ প্রয়োজনে ফোন ধরতেই হয়। সে ক্ষেত্রে কী করবেন চালকেরা? পুলিশের যুক্তি, সে ক্ষেত্রে গাড়ি বা মোটরসাইকেল রাস্তার পাশে থামিয়ে কথা সেরে ফেলতে হবে।