নৌকা-বিহারে বাধ্যতামূলক লাইফ জ্যাকেট পরাও, নির্দেশ জেলা প্রশাসনের। ছবি: পাপন চৌধুরী
২০১৮, ২০১৭ বা তারও আগে কয়েক বছর। ফি বছরই মাইথনে তলিয়ে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। কখনও বা পরিবেশ দূষণের অভিযোগ, তা-ও উঠেছে শীতকালে। এ বার তাই আগেভাগেই ১৫ ডিসেম্বর থেকে মাইথনে বেশ কিছু নিষেধাজ্ঞা জারির কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
২০১৮: সম্প্রতি সবুজদ্বীপে এক মাঝি তলিয়ে যান। প্রায় ৭২ ঘণ্টা পরে তাঁর দেহ মেলে। পুলিশের দাবি, মাঝির গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল না।
২০১৭: নৌকা থেকে পড়ে এক জন তলিয়ে যান। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ দাবি করে, ওই ব্যক্তির গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল না। এমনকি, তিনি মত্ত অবস্থায় ছিলেন। — এ বার শীতের মরসুমে এমন বিপত্তি যাতে না ঘটে তার জন্য নৌকা-বিহারে বেশ কিছু কড়াকড়ি করছে জেলা প্রশাসন। পশ্চিম বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম রায় জানান, পর্যটক বা মাঝি, সকলেরই লাইফ জ্যাকেট পরাটা বাধ্যতামূলক। মত্ত অবস্থায় নৌকায় চড়তে পারবেন না কোনও পর্যটক।
কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নৌকা চালকদের একাংশ বেশি টাকার বিনিময়ে মত্ত পর্যটকদের নৌকায় চাপাচ্ছেন। এমনকি, তাঁদের লাইফ জ্যাকেটও পরানো হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকি বাড়়ছে।
অরিন্দমবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘নির্দেশ অমান্য করলে পর্যটক ও মাঝি, উভয়ের বিরুদ্ধেই আইনি পদক্ষেপ করা হবে।’’ বিডিও (সালানপুর) তপনকুমার সরকার জানান, নৌকা চালকদের সঙ্গে বৈঠক করে এই নির্দেশ যাতে মানা হয়, তার জন্য বারবার সতর্ক করা হয়েছে।
অতীতে পিকনিকের সময়ে বা এই মরসুমে এলাকার পরিবেশ রক্ষা ঠিক ভাবে হয় না বলে অভিযোগ ওঠে। অতীতে সাফাইয়ের খরচ তুলতে মাইথনে পর্যটকদের গাড়ির জন্য ‘পার্কিং ফি’ দিতে হবে বলে জানিয়েছিল পঞ্চায়েত সমিতি। এমনকি, দূষণে লাগাম টানতে অতীতে বন ও পরিবেশ দফতরও এলাকায় যত্রতত্র বনভোজনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
এ বার বিষয়টি নিয়ে ফের সক্রিয় হয়েছে প্রশাসন। জেলা প্রশাসন জানায়, অতীতে অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, পিকনিকের রান্নার জন্য জ্বালানি সংগ্রহে জঙ্গলের কাঠ কাটা হচ্ছে। বনজ সম্পদের ক্ষতি কোনও ভাবেই করা যাবে না বলে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, মাইথনের কোথাও ডিজে বাজানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। থার্মোকল বা পলিথিনের কাপ, প্লেট, জলের বোতল ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে।
প্রশাসনের কর্তারা জানান, এই মরসুমে কয়েক মাস এলাকায় বেশ কিছু নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করা হবে। পর্যটকেরা যাতে প্রশাসনের নির্দেশ মানেন, সে বিষয়ে তাঁরা লক্ষ্য রাখবেন। নির্দেশ না মানা হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপও করা হবে। সালানপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল মজুমদার জানান, প্রশাসনের নির্দেশ কার্যকরী করতে ব্লকের স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীগুলিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনা আছে।