প্রভাবশালীরা বাংলা বলেন কই, আক্ষেপ সভার

অভিভাবকসুলভ ভঙ্গিতে শুধু একটি গল্প শোনালেন অশীতিপর কবি। বিলেতের বাংলাবিদ লেখক, শিক্ষক উইলিয়ম রাদিচের গল্প। বিলেতের ছাত্রেরা আরও ভাল বাংলা শেখার জন্য কলকাতায় যেতে চাইলে রাদিচে কিন্তু তাঁদের বারণ করেন। তিনি বলেন, ভাল ইংরেজি শিখতে হলে কলকাতায় যেও!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৩১
Share:

ভরসার-হাত: বিতর্ক-সভায় শঙ্খ ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

সভার মত যা-ই বলুক, তিনি বাংলা ভাষার পক্ষেই থাকলেন। রবি-সন্ধ্যায় লেক ক্লাবে ক্যালকাটা ডিবেটিং সার্কলের বিতর্কসভা। সভার মত ছিল, ‘বাংলা ভাষার পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে’। হাত তুলে ভোটাভুটিতে কিন্তু সেই বাংলার ভবিষ্যতেই ভরসা রাখলেন শঙ্খ ঘোষ।

Advertisement

অভিভাবকসুলভ ভঙ্গিতে শুধু একটি গল্প শোনালেন অশীতিপর কবি। বিলেতের বাংলাবিদ লেখক, শিক্ষক উইলিয়ম রাদিচের গল্প। বিলেতের ছাত্রেরা আরও ভাল বাংলা শেখার জন্য কলকাতায় যেতে চাইলে রাদিচে কিন্তু তাঁদের বারণ করেন। তিনি বলেন, ভাল ইংরেজি শিখতে হলে কলকাতায় যেও! ভাল বাংলার জন্য যাবে ঢাকা। বলা যায়, কিছুটা বাংলাদেশের উপরে ভরসাতেই বাংলায় ভরসা রাখলেন শঙ্খবাবু।

আরও পড়ুন: তালাক থাক, পাল্টা নারীকণ্ঠ জমিয়তের

Advertisement

তবে তাঁর মতে, ‘‘নীচের তলার বাংলাও গুরুত্বপূর্ণ। শহরের লেখাপড়া শেখা মানুষের দৃষ্টিতে সব কিছু দেখা ঠিক নয়।’’

বাংলা ভাষার বিপন্নতার প্রমাণ দাখিল করতেও সভায় ঘুরেফিরে এসেছে এই সব যুক্তি। সেই রবীন্দ্রনাথের আমল থেকেই শিক্ষিত সমাজের পরিশীলিত বাংলা বোঝেন না গ্রামের আমবাঙালি। বাংলাভাষীরা সংখ্যায় কম নন! কিন্তু কখনও ইংরেজির গায়ের জোরে কোণঠাসা তো, কখনও হিন্দির নকল করতে গিয়ে দিশেহারা। ‘আমি বাংলা বলি কেন কী আমি বাংলা ভালবাসি’-র মতো হিন্দিগন্ধী বাংলা নিয়ে কত ঠাট্টাই যে ছিটকে এল।

বাংলা ভাষার হয়ে বলতে গিয়ে কবি শ্রীজাত তবু তাঁর বিপক্ষের গুণী বাঙালিদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ! ‘‘আ-হা বাংলা লুপ্তপ্রায় হলেও ওঁরা তো বাংলাতেই লিখছেন, কাজ করছেন!’’ বিতর্কের সঞ্চালক তথা চিকিৎসক কুণাল সরকার শুনে হেসে ফেললেন। ‘‘একেই বলে, কিলিং সফটলি!! ইংরেজি বলতে বাধ্য করলে হে!’’ চলচ্চিত্র বিশেষজ্ঞ-প্রাবন্ধিক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, বাংলা রক গানের শিল্পী রূপম ইসলাম, সাংবাদিক-লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্য, স্বাতী ভট্টাচার্যদের অবশ্য দমানো গেল না। তাঁদের পাল্টা যুক্তি, কেউ ভাল বাংলা লিখলে কী হবে! প্রভাবশালী সম্পন্ন বাঙালিরা ক’জন বাংলা বলেন আদৌ?

বাংলা না-বলার যুক্তি কিন্তু বাংলাদেশে খাটে না, পাল্টা দিলেন ঢাকার দুই অতিথি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আরিফা রহমান রুমা ও সাংবাদিক রাহুল রাহা। বাংলাদেশ থাকলে বাংলা নিরাপদ, কবি সুবোধ সরকারও প্রত্যয়ী। তবে সভার অন্যতম অভিভাবক ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের মতে, বাংলাদেশের বাংলা-চর্চারও সবটা ভাল নয়। চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ও চিত্রপরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ও সভায় উপস্থিত ছিলেন অভিভাবক হিসেবে।

ভোটাভুটিতে বাংলা ভাষা কোণঠাসা বলে লোকে মানলেও ব্যবধান সামান্য।সান্ত্বনা এটুকুই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন