Hanuman Jayanti of VHP

রামনবমীর পর হনুমান জয়ন্তী পালনেও বড় প্রস্তুতি, নয়া সংযোজন পুলিশের বুকে ‘মমতা’ আনার প্রার্থনা

হনুমান জয়ন্তীর উৎসবের আবহ যেন অশান্তির জন্ম না দেয়, সেই মর্মে আগেই সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু বিশ্ব হিন্দু পরিষদ টানা কর্মসূচিতে এই উৎসবকে আন্দোলনের চেহারা দিতে চাইছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২৩ ১১:০৫
Share:

পরিষদ আগেই ঘোষণা করেছিল যে, রামনবমী থেকে শুরু করে হনুমান জয়ন্তী পর্যন্ত ‘রাম মহোৎসব’ পালন করবে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রাজ্যে হনুমান জয়ন্তী পালনকে কেন্দ্র করে যাতে অশান্তির পরিবেশ তৈরি না হয়, সে জন্য আগাম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রশাসনকে সতর্ক করেছেন তিনি। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবারের হনুমান জয়ন্তীর কর্মসূচিতে কোনও কাটছাঁট করছে না বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। বরং নতুন করে তারা রাজ্যের প্রায় ৫০০ জায়গায় প্রার্থনাসভার আয়োজন করতে চলেছে। সেখানে দিনভর ‘হনুমানচালিসা’ পাঠের পরিকল্পনাও রয়েছে।

Advertisement

হনুমান জয়ন্তী কেন্দ্র করে যে ‘অশান্তি’ ছড়ানো হতে পারে, সেই অভিযোগ বুধবারই আবার করেছে তৃণমূল। রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল মুখপাত্র শশী পাঁজা বলেছেন, ‘‘বাংলায় হিংসার রাজনীতি করছে বিজেপি। ১৯ বছরের একটি ছেলেকেও সমাজবিরোধী কাজে যুক্ত করছে ওরা। ছবিতে তাকে বন্দুক হাতে দেখা যাচ্ছে। এটাই ‘ভালচার পলিটিক্স’ (শকুনের রাজনীতি)।’’ শশী এ-ও বলেন, ‘‘সারা ভারতে রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন শুরু হয়েছে।বাংলাকে অশান্ত করতে নেমে পড়েছে বিজেপি। সামনেই হনুমান জয়ন্তী। সেখানেও অশান্তি হতে পারে। আমাদের আবেদন, প্রশাসনকে কাজ করতে দিন। সমাজবিরোধীদের কোনও ধর্ম থাকে না।’’

বস্তুত, রামনবমী এবং তৎপরবর্তী অশান্তির আবহে এক দিনেই হনুমান জয়ন্তী পালন শেষ না করে বিষয়টিকে আন্দোলনের চেহারা দিতে পরের বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা আট দিনের কর্মসূচি নিয়েছে পরিষদ। বহস্পতিবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রোজই কোনও না কোনও কর্মসূচি নিচ্ছে তারা। রাজ্য বিজেপির এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও ঘোষিত কর্মসূচি নেই। তবে গেরুয়া শিবির সূত্রের খবর, রামনবমীর মতো দলের কোনও মিছিল না থাকলেও নেতা-কর্মীরা অন্য সংগঠনের কর্মসূচিতে যোগ দেবেন।

Advertisement

রামনবমীর মিছিল ও শোভাযাত্রা ঘিরে রাজ্যের কয়েকটি জায়গায় বিক্ষিপ্ত ভাবে অনভিপ্রেত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যার জেরে উত্তপ্ত রাজ্য রাজনীতি। রাজ্যের দু’টি থানা এলাকাকে ‘উপদ্রুত’ ঘোষণা করে সংবিধানের ৩৫৫ অনুচ্ছেদ মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের কাছে দরবার করেছে বিজেপি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদও এ বার সেই একই পথে হাঁটতে চাইছে। আগামী সপ্তাহে পরিষদ রাজভবনে দু’বার স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা করে রেখেছে।

পরিষদ আগেই ঘোষণা করেছিল যে, রামনবমী থেকে শুরু করে হনুমান জয়ন্তী পর্যন্ত ‘রাম মহোৎসব’ পালন করবে। সেই হিসাবে আগে থেকেই বৃহস্পতিবার বেশ কয়েকটি জায়গায় মিছিলের পরিকল্পনা ছিল। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সেই সব মিছিলের পাশাপাশি প্রার্থনাসভারও আয়োজন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই প্রতিটি জেলা সংগঠনের কাছে সেই নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছে।

কী হবে সেই সমস্ত প্রার্থনাসভায়? বাংলার দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বুধবার জানিয়েছেন, রাজ্যের ‘মঙ্গলকামনায়’ প্রার্থনা হবে। তিনি বলেন, ‘‘বড় ধরনের শোভাযাত্রা যা হওয়ার, তা তো হবেই। বেশি করে প্রার্থনাসভা হবে। সেখানে ১০৮ বার হনুমানচালিসা পাঠ হবে। বাংলার প্রশাসনের কুমতি থেকে সুমতি আসুক— সেই প্রার্থনা করা হবে। হনুমান’জি হচ্ছেন রামচন্দ্রের শ্রেষ্ঠ ভক্ত। তাঁর কাছে এবং শ্রীরামের কাছে আমরা প্রার্থনা করব, বাংলার পুলিশ যে নির্মমতা দেখাচ্ছে তা বন্ধ হোক। তার বদলে পুলিশের হৃদয়ে মমতা আসুক।’’

মুখ্যমন্ত্রী সম্প্রতি বার্তা দিয়েছেন, হনুমান জয়ন্তীর মিছিল ঘিরে যাতে অশান্তি না হয়। এর পরে কি পরিষদ নিজেদের পরিকল্পনায় কোনও বদল আনছে? শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘পুলিশ তো আমাদের অনেক মিছিলেরই অনুমতি দেয়নি! হাওড়া জেলাতেই অনুমতি বাতিল হয় ২০টি মিছিলের। কিন্তু সাধারণ মানুষ সে সব উপেক্ষা করেই অংশ নিয়েছেন। তাঁরাই মিছিল করেছেন।’’

হনুমান জয়ন্তী পালনের পাশাপাশি রামনবমীর মিছিল ঘিরে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়েও পথে নামতে চাইছে পরিষদ। ঠিক হয়েছে, শুক্র ও শনিবার রাজ্যের সর্বত্র বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ হবে। অংশ নেবে হিন্দু জাগরণ মঞ্চও। জেলায় জেলায় প্রশাসনিক কর্তাদের স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এর পরে বাংলার বিভিন্ন মঠ-মিশনের সাধুসন্তদের নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চায় পরিষদ। শচীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘আমরা মনে করছি, বাংলার হিন্দু সমাজ বিপন্ন। তাই সাধুসন্তরা হিন্দুদের রক্ষার জন্য রাজ্যপালের কাছে কড়া ভূমিকা নেওয়ার আর্জি জানাবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন