ছাত্র মৃত্যুতে দাবি পুলিশের

মৃত্যুর জন্য কম্পিউটার গেম দায়ী নয়

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ময়নাতদন্তের পরে শনিবার সন্ধ্যায় অঙ্কনের দেহ পৌঁছয় বাড়িতে। ওই রাতেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা অবস্থা গোপীনাথ দে ও মা শম্পাদেবীর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০২:০৬
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ময়না তদন্তের রিপোর্ট বলছে, শ্বাসরোধ হয়ে মৃত্যু। আর পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত বলছে, আত্মহত্যা। কিন্তু কী কারণে আত্মঘাতী হল কেশপুরের আনন্দপুর এলাকার ছাত্র অঙ্কন দে, ২৪ ঘণ্টা পরেও স্পষ্ট হল না। তবে পুলিশ নিশ্চিত, ব্লু হোয়েল বা অন্য কম্পিউটার গেমের সঙ্গে অঙ্কনের মৃত্যুর যোগ নেই।

Advertisement

শনিবার দুপুরে চকবাজারে বাড়ির দোতলায় শৌচাগারে মেলে আনন্দপুর হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অঙ্কনের দেহ। মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ে থাকা দেহটির মাথা ছিল পাস্টিকে ঢোকানো। আর গলায় দড়ির ফাঁস। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শনিবার স্কুলে যায়নি অঙ্কন। সকালবেলা দীর্ঘক্ষণ বাবার কেব্‌ল ব্যবসার অফিসঘরে কম্পিউটারে বুঁদ হয়েছিল সে। তাই প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের ধারণা হয়েছিল, আত্মহত্যার পিছনে ‘ব্লু হোয়েল’-এর মতো কোনও সুইসাইড গেম থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু ওই কম্পিউটারে তেমন কোনও তথ্য পায়নি পুলিশ।

শনিবার রাতেই ঘটনার তদন্তে এলাকায় গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সচিন মক্কর। পরে তিনি বলেন, “আমরা ওই কম্পিউটার ঘেঁটে বিশেষ কিছু পাইনি। কোনও কম্পিউটার গেম পাওয়া যায়নি। তাই মৃত্যুর কারণ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তদন্ত চলছে।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, অঙ্কনের নোটবুকে চিরকুট মিলেছে। চিরকুটে বিভিন্ন হিন্দি শায়েরির বাংলা অনুবাদ করা ছিল। এর মধ্যে কয়েকটি শায়েরি দেখে মনে হচ্ছে, সেগুলি মানসিক অবসাদ থেকে লেখা।

Advertisement

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ময়নাতদন্তের পরে শনিবার সন্ধ্যায় অঙ্কনের দেহ পৌঁছয় বাড়িতে। ওই রাতেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে দিশাহারা অবস্থা গোপীনাথ দে ও মা শম্পাদেবীর। গোপীনাথবাবু এ দিন বলছিলেন, “ছেলে মাঝেমধ্যেই ওই কম্পিউটারে বসত। কিন্তু কী করত সেটা কখনও দেখিনি। কেনই বা ও এ ভাবে আমাদের ছেড়ে চলে গেল, বুঝতে পারছি না।”

এই মৃত্যুর পিছনে প্রেমঘটিত কোনও কারণ রয়েছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। যদিও সহপাঠীরা জানিয়েছে, অঙ্কনের মুখে তারা কখনও বিশেষ কোনও মেয়ের কথা শোনেনি। পড়াশোনা আর খেলাধুলো নিয়েই মেতে থাকত সে। তবে দশম শ্রেণিতে ওঠার পরে অঙ্কনের খেলাধুলো কিছুটা কমে এসেছিল। বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ কমে আসছিল।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে অঙ্কন যে কম্পিউটার দেখেছিল, সেখানে কিছু সিনেমা ছিল। তবে তাতে এমন কোনও দৃশ্য পাওয়া যায়নি, যা দেখে অঙ্কন ওই ভাবে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনা করতে পারে। অঙ্কনের জেঠতুতো দিদি তথা কেশপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শুভ্রা দে সেনগুপ্তও বলছিলেন, “পুলিশের আগে আমরাও ওই কম্পিউটার ঘেঁটে দেখেছি। সিনেমা ছাড়া আর কিছু পাইনি। তাই ভাইয়ের মৃত্যু আমাদের কাছেও খুব ধোঁয়াশার।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন