Visva Bharati University

বৈঠক এড়াল বিশ্বভারতী, কাটল না জট

কেন তারা বৈঠকে যায়নি, সে প্রসঙ্গে এ দিন বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি,  বৈঠকের স্থান ও সময় সম্পর্কে উপাচার্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শান্তিনিকেতন ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২০ ০২:৪৮
Share:

জনরোষ: পে-লোডারে ভাঙা পড়ল পৌষমেলার মাঠের পাঁচিল। ঢালাই মেশিন উল্টে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল অস্থায়ী ক্যাম্প অফিসও। ফাইল চিত্র।

বৈঠকের আমন্ত্রণ-পদ্ধতি আর স্থান-কাল নিয়ে প্রশ্ন তুলে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে গরহাজির থাকলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল দেওয়া নিয়ে যে অশান্তির সূত্রপাত, তার সমাধানের খোঁজে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বুধবার বোলপুরের মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে ওই বৈঠক ডেকেছিলেন বীরভূমের জেলাশাসক। বিশ্বভারতীর প্রতিনিধিই অনুপস্থিত থাকায় জট কাটল না। পড়ুয়া, আশ্রমিক, বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে আলোচনা হয়েছে অবশ্য।

Advertisement

কেন তারা বৈঠকে যায়নি, সে প্রসঙ্গে এ দিন বিকেলে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের দাবি, বৈঠকের স্থান ও সময় সম্পর্কে উপাচার্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। মাত্র এক দিন আগে উপাচার্যকে জানানো হয়। আমন্ত্রিতের তালিকা নিয়েও আপত্তি তুলেছে বিশ্বভারতী। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, ‘‘উপাচার্য মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে এই বৈঠকে থাকতে পারছেন না বলে জানিয়েছিলেন। কেননা বৈঠক বিশ্বভারতীর ক্যাম্পাসে হচ্ছে না। যে হেতু রাজ্য সরকারের নির্দেশে এই বৈঠক ডাকা হয়েছে, আর তার আয়োজক আমি, তাই জেলা প্রশাসনই বৈঠকের স্থান নির্ধারিত করেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আগামী দু’দিন লকডাউন। তার পরে আবার কিছু উৎসব অনুষ্ঠান রয়েছে। তাই তড়িঘড়ি বৈঠক।’’

বিশ্বভারতী এ দিনও পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলেছে। শান্তিনিকেতন থানা থেকে কুড়ি মিটার দূরে ভাঙচুর চললেও পুলিশের দেখা মেলেনি বলে তাদের অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘পুলিশ গিয়ে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: জরিমানা ১০ লাখ, আপাতত নেওয়া যাবে না অগ্রিম, ডিসানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ কমিশনের

ভাঙচুরের প্রতিবাদে এ দিন ১২ ঘণ্টার প্রতীকী অনশনে বসার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। সেই কর্মসূচিও হয়নি। ভারপ্রাপ্ত জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, “অনিবার্য কারণবশত অনশনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।” বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ শান্তিনিকেতনের উন্মুক্ত চরিত্রকে নষ্ট করছে অভিযোগে এ দিন সঙ্গীতভবন লাগোয়া শান্তিদেব ঘোষের বাড়ির সামনে সমবেত হন কয়েক জন আশ্রমিক। এরই মধ্যে বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির প্রাক্তন সদস্য তথা চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবক্ষ মূর্তিতে কালি লেপে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে।

পাঁচিল-কাণ্ডে বিশ্বভারতীর পক্ষ নিয়ে প্রথম থেকেই সরব বিজেপি নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিন ফের অভিযোগ করেছেন, ‘‘উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি সুরক্ষিত করতে পাঁচিল দিচ্ছিলেন। সেই অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। যারা পাঁচিল ভাঙল, তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর তো হলই না, উল্টে পুলিশ নীরব দর্শক হয়ে পাঁচিল ভাঙা দেখল।’’ এ দিন বিজেপির রাজ্য দফতর থেকে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত মিছিল করে দলের যুব মোর্চা। পুলিশ মিছিল আটকে গ্রেফতার করে যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি সাংসদ সৌমিত্র খান, অনুপম হাজরা-সহ কয়েক জনকে। পরে তাঁরা ছাড়া পান। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার মুখ্যমন্ত্রীকে খোলা চিঠি লিখে বিশ্বভারতীতে অশান্তির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।

বিশ্বভারতীর মেলার মাঠের পাঁচিল ভাঙার ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। মামলার নথি, এফআইআরের কপি চেয়ে রাজ্য ও জেলা পুলিশের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে ইডি। তারা মনে করছে, ‘সংগঠিত’ ভাবেই পাঁচিল ভাঙা হয়েছে। কে বা কারা নেপথ্যে থেকে ভাঙচুরের তহবিল জুগিয়েছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন ইডি-র তদন্তকারীরা। যদিও বুধবার বিকেল পর্যন্ত জেলা পুলিশ ইডি-র হাতে কোনও মামলার নথিপত্র তুলে দেয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন