Visva-Bharati

বিশ্বভারতীতে আলাপিনীর ঘরে তালা, ক্ষুব্ধ আশ্রমিকরা

বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী আশ্রমিক মহিলাদের জন্যই সমিতি তৈরি হয়। তৎকালীন উপাচার্য ইন্দিরা দেবী চৌধুরানী ছিলেন এই মহিলা সমিতির প্রেসিডেন্ট।

Advertisement

​নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:২৭
Share:

ফের বিতর্ক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে — ফাইল চিত্র

নতুন বিতর্ক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। বহু পুরনো আলাপিনী মহিলা সমিতির ঘর শুক্রবার সিল করে দিলেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘরের সামনেই প্রতিবাদে বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী মহিলারা। শোনা যাচ্ছে, এই ঘরটির ভাড়া বাবদ সমিতির কাছ থেকে অর্থ চেয়েছিলেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। তা না দেওয়ার জন্যই ঘরটি সিল করে দেওয়া হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর।সমিতির অন্যতম সদস্য শর্মিলা রায় পোমোর বক্তব্য, “ওখানে সমিতির ঘরের জন্য অর্থ চাওয়া হচ্ছে। মাসে দু’টো অধিবেশনের জন্য যে অঙ্ক চাওয়া হচ্ছে, সেটা অভাবনীয়। সব কিছু অর্থ দিয়ে হয় না। আজকের প্রশাসক সমানে প্রাক্তনী, আশ্রমিক এবং এখন আমাদের কাছে অর্থ চেয়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের কাছে অরাবীন্দ্রিক। প্রশাসক আর্থিক দিকটা নিয়ে চিন্তা করেন বেশি।’’ শর্মিলা বলছেন, ‘‘১৯৫৩ সালে আলাপিনীর সদস্যরাই আনন্দ পাঠশালার সূচনা করেন, যা এখন ‘মৃণালিনী আনন্দ পাঠশালা’ নামে পরিচিত। এখান থেকে প্রতি বছর বিশ্বভারতীর একটা ভাল পরিমাণ টাকা আয় হয়। যদি সব কিছু অর্থ দিয়েই উনি বিচার করবেন, তা হলে এটাও ওঁর মাথায় রাখা উচিত। ঘটনার প্রতিবাদে আগামী রবিবার আনন্দ পাঠশালার গেটে মাটিতে বসে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। সাংবাদিকদের জানাচ্ছি। গান করছি। এই আমাদের প্রতিবাদের ভাষা।’’ শুধু তা-ই নয়, প্রশাসককে চিঠি লিখলে উত্তর দেন বলেও অভিযোগ করেন শর্মিলা।

Advertisement

আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর এই ঐতিহ্য আলাপিনী মহিলা সমিতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত খুব ব্যথিত করার মতো বিষয়। কর্তৃপক্ষ কেন এমন সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন জানি না।’’ এই সিদ্ধান্তে ব্যথিত খোদ ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুদৃপ্ত ঠাকুরও। বললেন, ‘‘রবীন্দ্রনাথের সময় থেকে চলে আসছে একটা প্রতিষ্ঠান। সেখানে হাত পড়লে খারাপ লাগে। এমন কোনও খবরই খুব দুঃখজনক।’’

কেন বন্ধ করা হল সমিতির ঘর, তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পিআরও কিছু বলতে চাননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি উপাচার্য ঘনিষ্ঠ মহলে মন্তব্য করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীরা বিশ্ববিদ্যালয় বা আশ্রমের কোনও কাজে লাগেন না। তাই তাঁদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন বাড়তি দায়িত্বের বোঝা বহন করবে?

Advertisement

আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর রাস্তা ঘেরার কাজ বন্ধ করল প্রশাসন, রাস্তার দখল নিল পূর্ত দফতর

শর্মিলা জানালেন, ১৯১৬ সালে শান্তিনিকেতনের গুরুপত্নীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আশ্রমের নানা সাংস্কৃতিক, সমাজকল্যাণ এবং সেবামূলক কাজে অংশগ্রহণ করেছেন আলাপিনীর সদস্যারা। আশ্রমের প্রথম দিকে গ্রেসন গ্রিন নামে এক বিদেশিনি আসেন শান্তিনিকেতনে, যিনি ধাত্রীবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি এসে এই ধাত্রীবিদ্যা ও প্রাথমিক চিকিৎসা শেখান আশ্রমের মেয়েদের। সেই সময় সমিতির সদস্যা কিরণবালা সেন ও ননীবালা দেবী ধাত্রীবিদ্যা শিখে আশ্রম ও আশ্রম সংলগ্ন এলাকার প্রসূতিদের সেবায় নিয়োজিত হন। বছর কয়েক আগে পর্যন্তও ফি বছর রবীন্দ্র সপ্তাহে একটি দিনের অনুষ্ঠানের আয়োজন ও পরিবেশনা এবং শারদোৎসবে নাটক পরিবেশন করতেন সমিতির সদস্যারা।

সমিতির অভিযোগ, বর্তমান উপাচার্য আসার পরে সেই পরিসর বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতি বছর ৭ পৌষ দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া নাম অনুসারে তাঁরা 'শ্রেয়সী' নামে একটি সাহিত্য পত্রিকাও প্রকাশ করেন। পাঠভবনের ছাত্রীনিবাস ও ক্যান্টিনে গিয়ে ছাত্রীদের খাওয়াদাওয়া ও পোশাকেরও নিয়মিত তদারকি করেন সিমিতির সদস্যারা। মেধাবী পড়ুয়াদের বইও উপহার দেওয়া হয়।এই সমিতির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরেই আশ্রমের নানান সংস্কৃতি়মূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া আনন্দ পাঠশালা তৈরি হয়েছিল এই আলাপিনী মহিলাদের উদ্যোগে। সেই মোতাবেক দীর্ঘদিন ধরেই তাদের বসার একটি ঘর ছিল। বিশ্বভারতীর পাঠভবনে ঢোকার মুখে সেই ঘর হঠাৎ শুক্রবার নোটিস দিয়ে বন্ধ করে দেন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে পাঠভবন ঢোকার মুখে প্রতিবাদ জানিয়েছেন মহিলারা।

আরও পড়ুন: গৃহশিক্ষক থেকে কোটিপতি, ফ্ল্যাট সিল, বিনয় সিবিআই নজরে

শান্তিনিকেতনবাসীদের অবশ্য প্রশ্ন, কী ভাবে ঠাকুর পরিবারের তৈরি একটা সমিতি বন্ধ করে দিতে পারে বিশ্বভারতী? আর এক আশ্রমিক উর্মিলা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী ধীরে ধীরে তাদের ঐতিহ্যকে নষ্ট করছে। এটা এমনই আর একটা কাজ। আলাপিনী রুম সিল করা খুবই দুঃখজনক ঘটনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন