দাসপুরে শুরু তৃণমূলের কোন্দল

প্রার্থী ঘোষণার আগেই দেওয়ালে মমতার নাম

ভোট-প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলেও নির্বাচনী নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষিত হয়নি। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি কোনও দল। তবে প্রার্থীর নাম দিয়ে দেওয়াল লিখন তাতে থেমে নেই। বর্তমান বিধায়কদের প্রায় সব জায়গাতেই প্রার্থী করার একটা বার্তা ইতিমধ্যে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০০:৪৭
Share:

দেওয়াল লিখন মমতা ভুঁইয়ার নামে। কৌশিক সাঁতরার তোলা ছবি।

ভোট-প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেলেও নির্বাচনী নির্ঘণ্ট এখনও ঘোষিত হয়নি। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেনি কোনও দল। তবে প্রার্থীর নাম দিয়ে দেওয়াল লিখন তাতে থেমে নেই।

Advertisement

বর্তমান বিধায়কদের প্রায় সব জায়গাতেই প্রার্থী করার একটা বার্তা ইতিমধ্যে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই প্রেক্ষিতেই দাসপুরের তৃণমূল বিধায়ক মমতা ভুঁইয়াকে সম্ভাব্য প্রার্থী ধরে দেওয়াল লিখতে শুরু করে দিয়েছেন তাঁর অনুগামীরা। রবিবার থেকে মমতাদেবীর নাম দিয়ে দাসপুরের একাধিক জায়গায় দেওয়াল লেখা চলছে। এ নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে কোন্দলও। এমনকী চুপিসাড়ে অনেক ব্লক নেতাই শাসাচ্ছেন, সিপিএমের ভরা সময়েও যেখানে গোটা জেলা থেকে একমাত্র দাসপুর থেকে তৃণমূল প্রার্থী জিতেছিলেন, সেখানে স্থানীয় নেতাদের আবেগকে মান্যতা না দিলে এই কেন্দ্র থেকেই দলের পতন শুরু হবে।

তৃণমূল সূত্রের খবর, দাসপুর ১ ও ২, দু’টি ব্লকের প্রায় সাতজন রয়েছেন এই বিধানসভায় টিকিট পাওয়ার দৌড়ে। মমতাদেবী গত বারের বিধায়ক হওয়ায় তিনি তো ছিলেনই। ফলে, দলীয়ভাবে তালিকা প্রকাশের আগেই প্রার্থীর নাম দিয়ে দেওয়াল লেখা শুরু হতে দলের প্রথম সারির নেতারাই কর্মীদের সঙ্গে বাক-বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে দাসপুর ২ ব্লকের নেতারা ক্ষোভে ফুঁসছেন। যদিও মমতাদেবীর দাবি, প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত পেয়েছেন বলেই দেওয়াল লেখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, “রাজ্য নেতৃত্বের সবুজ সঙ্কেত না পেলে আর কেন দেওয়াল লেখা হবে?” তৃণমূলের দাসপুর ১ ব্লক সভাপতি সুকুমার পাত্রেরও বক্তব্য, “দেওয়াল লিখতে খরচ হয়। মোছার জন্য তো লিখিনি!” তবে কোন্দল নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি। যদিও দাসপুর ২ ব্লক সভাপতি তপন দত্তের বক্তব্য, “রাজ্য থেকে জেলা নেতৃত্ব, সকলেই ভোট প্রস্তুতির নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দেওয়াল লেখার নির্দেশ আমাদের কাছে আসেনি।”

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে খবর, কোন বিধানসভা কেন্দ্রে কে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে জোর জল্পনা চলছে জেলা জুড়ে। বাম–কংগ্রেসের জোট আবহে বহু কেন্দ্রে রদবদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তারই মধ্যে এই দেওয়াল লিখন। জেলায় এই প্রথম কোনও প্রার্থীর নামে দেওয়াল লিখন শুরু হয়েছে। আর তা নিয়ে কোন্দল বেধেছে শাসক দলের অন্দরে।

তৃণমূলেরই একাংশ জানাচ্ছেন, দাসপুর কেন্দ্রে এ বার দাসপুর ২ ব্লক থেকে কাউকে প্রার্থী করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন সংশ্লিষ্ট ব্লক ও অঞ্চল নেতৃত্ব। ওই ব্লকের ১৪টি অঞ্চলের সভাপতি, জনপ্রতিনিধিরা খোদ দলনেত্রীকে লিখিতভাবে এই দাবি জানিয়েছিলেন। দাসপুর ১ ব্লক থেকেও এ বার একাধিক নাম ছিল প্রার্থীপদের দৌড়ে। স্বাভাবিক ভাবেই দলনেত্রীর মুখে নাম না-শুনে সরাসরি দেওয়ালে প্রার্থীর নাম দেখে যারপরনাই ক্ষুব্ধ মমতা ভুঁইয়ার বিরোধী গোষ্ঠী। কিন্তু সরাসরি কিছু বলতে চাইছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের জেলা কমিটির এক সদস্য বলেন, “রবিবার রাতেই বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। এ বার ফের মমতা ভুঁইয়া প্রার্থী হলে দলের ফল ভাল হবে না এ কথাও জানানো হয়েছে।”

দাসপুর বিধানসভায় মোট ভোটার ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৯৫। মহিলা ভোটার ১লক্ষ ৩২ হজার ১২৬। তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দাসপুর ১ ব্লকের প্রার্থীই বাছাই করেছেন দলনেত্রী। গত বিধানসভার উপ নিবার্চনেও দাবি উঠেছিল দাসপুর ২ ব্লক থেকেই প্রার্থী করতে হবে। এমনকী, সে দাবি পূরণ না-হওয়ায় কোন্দলও প্রকাশ্যে এসেছিল। বেগতিক বুঝে মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীকে আসরে নামতে হয়েছিল।

এ বার ওই ব্লক থেকেই তিনজন রয়েছেন প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে। কিন্তু চূড়ান্ত তালিকায় ব্লকেরই কেউ থাকুন এটা চাইছেন ব্লক নেতৃত্ব। এই অবস্থায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনের জন্য মমতা ভুঁইয়ার নাম দেওয়ালে দেখে হতাশ দলের সাধারণ কর্মীরাও। গত লোকসভা ভোটে ওই কেন্দ্র থেকে দলীয় প্রার্থী দীপক অধিকারী তথা দেব ৩৭ হাজার ভোটে এগিয়েছিলেন। তার মধ্যে দাসপুর ২ ব্লক থেকেই ২৭ হাজার ভোট বেশি পেয়েছিলেন দেব। দাসপুর ২ ব্লক কমিটির এক সাধারণ সম্পাদক সরাসরি জানিয়েছেন, “গত বারে মুকুল রায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আমাদের ব্লক থেকেই প্রার্থী করা হবে। মুকুলবাবু দলে রয়েছেন। তাঁকেও বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে বেগতিক হলেই ফলও হবে উল্টো।”

ওই নেতা আরও স্পষ্ট করে জানান, বরাবরই দাসপুর ব্যতিক্রম। সিপিএমের ভরা সময়েও গোটা জেলা থেকে একমাত্র দাসপুর কেন্দ্রেই দলীয় প্রার্থী জয়ী হয়েছিলেন। ফলে স্থানীয় নেতাদের আবেগকে মান্যতা না দিলে দায় পড়বে দলের উপরতলার নেতাদেরই। এই কেন্দ্র থেকেই দলের পতনও শুরু হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন