প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার রামপুরহাটে। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
সিবিআই ইডির মতো বিভিন্ন সংস্থাকে কাজে লাগিয়ে কেন্দ্র প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে বলে বার বার অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তাঁর পাল্টা হুমকি, ‘‘রাজ্যের হাতেও সিআইডি আছে, এসটিএফ আছে। আর্থিক দুর্নীতি ধরার ব্যবস্থা আছে। আমরাও চাইলে তদন্ত শুরু করতে পারি।’’ সেই সূত্রেই তিনি টেনে আনেন বিজেপির একাধিক নেতা নেত্রীর নাম জড়িয়ে থাকা শিশু পাচার, গ্যাস কেলেঙ্কারি এবং যৌন হয়রানি সংক্রান্ত অভিযোগের প্রসঙ্গ।
তাঁর আঁকা ছবি ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থার কোটি কোটি টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে বলে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব যে অভিযোগ এনেছেন, তাকেও প্রকাশ্যে নস্যাৎ করে মমতা বলেন, ‘‘মোদীবাবু, আপনাকে চ্যালেঞ্জ করছি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছবি এঁকে এক পয়সাও নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছে, প্রমাণ করে দেখান।’’ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের আনা ওই অভিযোগের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হবে বলেও মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন।
বুধবার রামপুরহাটের প্রশাসনিক সভা থেকে বিজেপিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী। জবাব দেন মঙ্গলবার কাঁথির দলীয় সভা থেকে শাহের তোলা একাধিক অভিযোগের। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমি লিখলেও চুরি করি, আঁকলেও নাকি চুরি করি! আমি ছোটবেলা থেকে রাজনীতি করি। সারা গায়ে চোট। কোনও দিন মাথা নত করিনি। তোমরা আমার কিচ্ছু করতে পারবে না। ক্ষমতা থাকে বাংলার গায়ে হাত দিয়ে দেখাও।’’
রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে যে সমস্ত মামলা আছে, তার কাগজপত্র তাঁর হাতে আছে বলে দাবি করে মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন, ‘‘আমাদের হাতেও সিআইডি আছে, এসটিএফ আছে। আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের সেল আছে।’’ এর পরেই বিজেপির উদ্দেশে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘শিশু চুরির মামলা এখনও আছে। বলুন করেছেন কি করেননি? গ্যাস কেলেঙ্কারি, মহিলা নির্যাতনের মামলা আছে। বলুন করেছেন, কি করেননি?’’
এই সূত্রেই মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘যতই সিবিআই দেখাও, যে আয়না দেখাচ্ছ, সেই আয়নায় কিন্তু তোমাদেরও দেখতে হবে। রাফাল বেরোবে। নোটবন্দি বেরোবে। তখন তোমরা যাবে কোথায়?’’
অন্য দিকে, দীর্ঘ দিন ধরেই রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির অভিযোগ বাংলায় দুর্গা পুজো, সরস্বতী পুজো করতে দেওয়া হয় না। একাধিকবার এ অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। এমনকি, বিসর্জন স্থগিত রেখে কেন মহরম করতে দেওয়া হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। মঙ্গলবার কাঁথির সভায় অমিত শাহ হুঙ্কার দিয়েছিলেন— ‘‘এখানে পুজো করা না গেলে কি পাকিস্তানে গিয়ে করতে হবে?’’
এ দিন তার জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা হঁশিয়ারি, ‘‘কয়েকটা বন্ডেড লেবার, ক্রীতদাস, দাঙ্গাবাজ বলছে, দুর্গাপুজো হয় না। সরস্বতী পুজো হয় না। চ্যালেঞ্জ করছি। প্রমাণ করুন। নয়তো রাজনীতি ছেড়ে দিন।’’ এরপরেই মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা অভিযোগ, বাংলায় দুর্গাপুজো করার জন্য ক্লাবগুলোতে আয় কর দফতর চিঠি পাঠিয়েছে। সরকার পুজো কমিটি গুলিকে ১০ হাজার টাকা করে দিয়েছে বলে আদালতে মামলা হয়েছে। এগুলোও কেন্দ্রীয় সরকারের ‘চক্রান্ত’। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘মুম্বইয়ে গণপতি পুজোয় এ সব করতে পারবেন?’’
তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘কিছু অর্ধ শিক্ষিত, গর্দ-শিক্ষিত দিল্লি থেকে এখানে এসে অশান্তি করার চেষ্টা করছে। এরা বাংলার শিক্ষা-সংস্কৃতি কিচ্ছু জানে না। ঐক্য নয়, দাঙ্গা বাধানোই এদের লক্ষ্য।’’