তৃণভোজী প্রাণীদের সুস্থতা ও স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে নজর রাজ্য সরকারের। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা চিড়িয়াখানার তৃণভোজী প্রাণীদের সুস্থতা ও স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চায় রাজ্য সরকার। সেই উদ্যোগে বিশেষ ভাবে তৈরি খাদ্য সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন নিগম লিমিটেড। সংস্থার উদ্যোগে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে এই খাদ্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। যেখানে প্রতিটি প্রাণীর প্রজাতি, বয়স, শারীরিক অবস্থা ও প্রাকৃতিক খাদ্যাভ্যাসকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি নিগমের। সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের দাবি, এই পরিকল্পিত খাদ্যব্যবস্থার ফলে প্রাণীদের স্বাস্থ্য অনেকটাই উন্নত হয়েছে।
নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণভোজী প্রাণীদের হজমক্ষমতা ঠিক রাখতে খাদ্যে বেশি ফাইবারের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি। সেই কারণে প্রস্তুত খাদ্যে সাধারণত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ক্রুড ফাইবার রাখা হচ্ছে। এতে অন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় থাকে এবং হজমজনিত সমস্যা কমে। পাশাপাশি প্রোটিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখা হয়। বেশির ভাগ তৃণভোজী প্রাণীর জন্য খাদ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ক্রুড প্রোটিনই যথেষ্ট বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
খাদ্য পরিকল্পনায় ভিটামিন ও খনিজের প্রয়োজনীয়তাকেও আলাদা ভাবে বিবেচনা করা হয়। যেমন, হাতির ক্ষেত্রে বেশি পরিমাণ ভিটামিন–ই ও ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার প্রয়োজন হয়, যা তাদের হাড় ও পেশির সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। অন্য দিকে, অতিরিক্ত স্টার্চ ও শর্করা জাতীয় উপাদান তৃণভোজী প্রাণীদের হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই খাদ্য প্রস্তুতের সময় স্টার্চ ও শর্করার মাত্রা খুব কম রাখা হয়।
প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্যে ভিটামিন ও খনিজের পরিপূরক যোগ করা হয়, যাতে পুষ্টির ভারসাম্য বজায় থাকে। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণীসম্পদ উন্নয়ন নিগমের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, এই খাদ্য পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে চিড়িয়াখানার প্রাণীচিকিৎসক ও প্রাণীপুষ্টিবিদদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করা হয়। তাঁদের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্যের উপাদান ও গুণগত মান সময়ে সময়ে পর্যালোচনা করা হয়।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের একাংশের মতে, এই বৈজ্ঞানিক খাদ্য ব্যবস্থাপনার ফলে তৃণভোজী প্রাণীদের অসুস্থতার হার কমেছে এবং তাদের স্বাভাবিক আচরণ ও কর্মক্ষমতা আগের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত হয়েছে।