Mamata Banerjee on Indigo Issue

ইন্ডিগো বিভ্রাট: এমন অচলাবস্থা কখনও দেখিনি, এ তো বিপর্যয়! বিকল্প পরিকল্পনার অভাব নিয়ে কেন্দ্রের দিকেই আঙুল মমতার

পাইলটদের বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু কোনও বিকল্প পরিকল্পনা না করেই কেন্দ্র কেন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করে দিল, তা নিয়ে প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সাধারণ মানুষের সময়ের দামের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৪:০৫
Share:

বিমান বিভ্রাট নিয়ে কেন্দ্রকে দায়ী করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

ইন্ডিগো বিভ্রাট নিয়ে এ বার কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যাত্রী পরিষেবার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা না করেই কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন মুখ্যমন্ত্রীর। তাঁর বক্তব্য, হাতে অন্তত ১৫-২০ দিন সময় নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করে, তার পরে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যেত। কিন্তু তা না-করেই, নয়া বিধি কার্যকর করে দেওয়া হয়েছে। আমজনতার এই ভোগান্তির জন্য বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে দুষেছেন তিনি।

Advertisement

সোমবার দুপুরে কলকাতা থেকে দু’দিনের সফরে উত্তরবঙ্গের উদ্দেশে রওনা দেন মুখ্যমন্ত্রী। দমদম বিমানবন্দরে প্রবেশের আগে সপ্তাহব্যাপী বিমান বিভ্রাট নিয়ে মুখ খোলেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমার খুব খারাপ লাগছে। কোনও পরিকল্পনা ছাড়াই বেশির ভাগ বিমান সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে— এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক।” যে বিমানগুলি পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলিরও ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। মমতার কথায়, স্বাভাবিক সময়ে যে বিমানের ভাড়া ৩০০০ টাকা থাকার কথা, এখন তার ভাড়া ৫০০০০ টাকা হয়ে গিয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে যে হয়রান হতে হচ্ছে, তা-ও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

ইন্ডিগোর বিমান বিপর্যয়ের জেরে সম্প্রতি নিজেদের বিয়ের ‘রিসেপশন’ পৌঁছোতে পারেননি এক দম্পতি। ভিডিয়ো কলেই তাঁরা শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেই পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ করেন মমতা। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমি কখনও এমন অচলাবস্থা দেখিনি। এটি একটি বিপর্যয়।” এর পরেই বিমান বিভ্রাটের জন্য কেন্দ্রকে দায়ী করে একের পর এক আক্রমণ শানান মুখ্যমন্ত্রী। ভুক্তভোগীদের জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও তোলেন তিনি। বস্তুত, বিমান বিভ্রাট নিয়ে পুরো প্রতিক্রিয়াই ইংরেজিতে দেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, গোটা দেশে ভুক্তভোগীদের উদ্দেশে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ইংরেজিতে প্রতিক্রিয়া জানান মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

দমদম বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের উদ্দেশে মমতা বলেন, “কেন্দ্রের কিছু একটা করা উচিত ছিল। আপনারা কী ভাবে সাধারণ জনতাকে সমস্যায় ফেলতে পারেন, হয়রান করতে পারেন!” সাধারণ মানুষেরও যে সময়ের দাম রয়েছে এবং তাঁরা যে সময় বাঁচানোর জন্যই বিমানে সফর করেন, তা-ও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি। ব্যবসায়িক কারণেও যে অনেকে সাধারণ মানুষ বিমানযাত্রা করেন, সে কথাও উল্লেখ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “যদি তাঁদের (সাধারণ মানুষের) উদ্দেশ্য ফলপ্রসূ না-হয়… ৭-৮ দিন ধরে কাদের ভুগতে হচ্ছে? বিমানবন্দরের ভিতরে হাজার-হাজার, লক্ষ-লক্ষ যাত্রীদের বসে থাকতে হচ্ছে। তাঁরা বিক্ষুব্ধ। তাঁদের হয়রান করা হচ্ছে। তাঁদের উপর মানসিক অত্যাচার চালানো হচ্ছে।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি কেন্দ্রকে অনুরোধ করব, কিছু একটা পরিকল্পনা করুন, যাতে অন্তত অর্ধেক বিমান সচল থাকে। বাকিটা অন্য কিছু ব্যবস্থা করুন। আমি জানি না ওরা (কেন্দ্র) কী করছে। দেশের বিষয়ে তাদের কোনও আগ্রহ নেই। বিজেপি সরকার শুধু তাদের নির্বাচন নিয়ে ভাবছে। কী ভাবে ভোট, ইভিএম, নির্বাচন কমিশন এবং (কেন্দ্রীয়) সংস্থাগুলিকে নিজেদের দখলে রাখবে, তা নিয়েই ওরা আগ্রহী। কিন্তু ওরা জনগণের কথা ভাবে না। এটাই ওদের প্রধান সমস্যা। আমরা সাধারণ মানুষের কথা ভাবি। তাই, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি খারাপ থেকে আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।” বিমান পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটলে সাধারণত সংশ্লিষ্ট সংস্থাকেই যাত্রীদের দেখভালের খরচ বহন করতে হয়। কিন্তু এখন উড়ান সংস্থা সরকারি নির্দেশিকার কথা বলছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে পাইলট এবং বিমানকর্মীদের কাজের সময় এবং বিধি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল দেশের উড়ান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ। ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশনস’ নামের ওই বিধি ১ নভেম্বর থেকে চালু হয়েছে। আর তাতেই বিপাকে পড়েছে ইন্ডিগো। এই নিয়মবিধি মেনে উড়ান পরিষেবা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছিল না তাদের। অন্য বিমান সংস্থাগুলির তুলনায় কিছুটা সস্তায় যাত্রীদের উড়ান পরিষেবা দিয়ে থাকে ইন্ডিগো। তাদের অনেক বিমানই রাতে অবতরণ করে। তাই নয়া বিধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে এই বিমান সংস্থাই। নয়া বিধি মেনে পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যত সংখ্যক কর্মী এবং পাইলট প্রয়োজন, বর্তমানে তা ইন্ডিগোর নেই। ফলে চরম সঙ্কট তৈরি হয়েছে। যার জেরে যাত্রীদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।

বাস্তব পরিস্থিতির কথা বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওভার ডিউটি করতে হয়। কিন্তু পাইলটদেরও তো রেস্ট নেওয়া দরকার। এটা আমি মানি। কিন্তু এ সবের আগে ১৫-২০ দিন হাতে সময় নিয়ে কোনও বিকল্প ব্যবস্থা খুঁজে তার পরে করতে হবে। ওরা (কেন্দ্র) তো জানত, এটা হলে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হবে আমজনতার। এখন আমজনতা ভুগছে। কিন্তু ওরা ভাবছে, কী হয়েছে, হতে দাও! ভোট এলে আমরা ঠিক কিছু না কিছু বলে সামলে নেব। এ ভাবে দেশ চলে না।” নাম না-করে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও নিশানা করেন তিনি। মমতা বলেন, “বেশি সময় কাটাব দেশের বাইরে গিয়ে। কিন্তু দেশের ভিতরের সমস্যা দেখার কোনও সময় নেই। যে লোকেদের এত দিনের ক্ষতি হল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” ভুক্তভোগী বিমানযাত্রীদের আদালতে যাওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

সোমবার লোকসভায় জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’ রচনার ১৫০ বছর পূর্তি সংক্রান্ত আলোচনায় বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই আলোচনা প্রসঙ্গেও প্রশ্ন করা হয় মুখ্যমন্ত্রীকে। জবাবে তিনি বলেন, “বন্দে মাতরমের পুরো গানটি কখনও নেওয়া হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিছু নির্বাচিত লাইন তৈরি করেছিলেন। তার উপরেই জাতীয় গান হিসাবে বন্দেমাতরমকে গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রথমে রাজ্যসভায় নোটিফিকেশন দিয়েছিল— জয়হিন্দ, বন্দেমাতরম বলা উচিত নয়। কাল বিজেপির কেউ কেউ বলেছে, নেতাজিকে আমরা পছন্দ করি না। আরে তোমরা নেতাজি, গান্ধীজি, রাজা রামমোহন রায়— কাউকেই পছন্দ করো না। তা হলে কাকে করো? দেশের সম্পর্কে জানেন না, এই সব লোক কী ভাবে এল। নেতাজি, বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, রামমোহনকে অপমান করে। এরা জানে বাংলার অবদান?”

রবিবার কলকাতায় একটি গীতাপাঠের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে সাধুসন্তদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির বিভিন্ন নেতারা উপস্থিত ছিলেন। জানা যাচ্ছে, সেখানে সাধুসন্তদের কেউ কেউ বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীও সেই অনুষ্ঠানে থাকলে ভাল হত। সে প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে মমতা বলেন, “আমি কী করে জানব। বিজেপির প্রোগ্রামে আমি যাব কী করে। এটা যদি নিরপেক্ষ অনুষ্ঠান হত, আমি নিশ্চয়ই যেতাম। কিন্তু বিজেপির প্রোগ্রামে আমি কী করে যাব! আমি তো একটা পার্টি করি। আমার তো একটা আদর্শ রয়েছে। আমি সব ধর্মকে সম্মান করি। সব বর্ণ, সব জাতিকে সম্মান করি। কিন্তু যেখানে বিজেপি সরাসরি যুক্ত, সেখানে আমি যাব কী ভাবে। যাঁরা বলছে নেতাজিকে ঘৃণা করি, গান্ধীজিকে মানি না— আমি সেখানে যেতে পারব না। আমার বাবা-মা এই শিক্ষা আমাকে দেয়নি আমার শিক্ষকেরা এই শিক্ষা দেয়নি। আমার বাংলার মাটি এই শিক্ষা দেয়নি। যাঁরা বাংলাকে অপমান করে, যাঁরা বাংলা বিরোধী, তাঁদের সঙ্গে আমি নেই।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement