দার্জিলিঙে এলেই আর নয় বসবাসের শংসাপত্র

১৯৫০ সালের ইন্দো-নেপাল চুক্তির ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী নেপালিরা এ দেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন। কিনতে পারেন জমিজমা, করতে পারেন সরকারি চাকরিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দার্জিলিঙ শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০৩:৪৩
Share:

ছবি: সংগৃহীত

নেপাল এবং বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশের কথা মাথায় রেখে দার্জিলিং জেলায় বসবাসের শংসাপত্র (রেসিডেন্স সার্টিফিকেট) দেওয়ার ক্ষেত্রে কঠোর হচ্ছে রাজ্য সরকার। এত দিন এ সব দেওয়ার ক্ষেত্রে খুব কড়াকড়ি ছিল না। কিন্তু পাহাড়ের অশান্তিতে নেপালের ঝাপা এবং ইলম জেলার দাগিদের যোগসূত্র দেখে সরকার কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছে বলে নবান্ন সূত্রের দাবি। তবে শুধুমাত্র নেপালি অনুপ্রবেশই নয়, শিলিগুড়িকে ঘিরে যে ভাবে বাংলাদেশিদের জাঁকিয়ে বসার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তার দিকেও প্রশাসনের বাড়তি নজর থাকবে বলে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা জানিয়েছেন।

Advertisement

১৯৫০ সালের ইন্দো-নেপাল চুক্তির ৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী নেপালিরা এ দেশে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারেন। কিনতে পারেন জমিজমা, করতে পারেন সরকারি চাকরিও। কিন্তু তার জন্য বসবাসের শংসাপত্র নিতে হয় এ দেশে আসা নেপালিদের। কিন্তু
গত কয়েক দশকে যে ভাবে দার্জিলিংয়ে নেপালি জনসংখ্যা বেড়েছে তাতে বদলে গিয়েছে পাহাড়ের জন-চরিত্র। গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের পিছনেও এই নেপালিদের হাত দেখছেন রাজ্যের গোয়েন্দারা। সেই কারণেই রাজ্য নেপাল চুক্তির ৭ নম্বর ধারার পরিবর্তন চায়। কিন্তু তা সময় সাপেক্ষ বিষয়। তার ফলে আপাতত পাহাড়ে নেপালি এবং সমতলে বাংলাদেশিদের ঠেকাতে বসবাসের শংসাপত্র দিতে কড়া মনোভাব নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের খবর, সম্প্রতি সিকিম সরকারও বসবাসের শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়া মনোভাব নিচ্ছে। ১৯৭৫ সালের ২৬ এপ্রিলের আগে থেকে সিকিমে যারা বসবাস করছেন তাঁরাই একমাত্র সিকিমের অধিবাসী বলে ধরা হচ্ছে। বাকিদের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণ পেশ করার নির্দেশ জারি করেছে পবন চামলিং সরকার। সিকিম মনে করছে, সে রাজ্যের আদি বাসিন্দাদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যই এই সিদ্ধান্ত যা নিয়ে সদ্য সিকিমে গিয়ে ঘাঁটি গাড়া নেপালিরা সমস্যা পড়েছে। তাদের অনেকে এখন দার্জিলিংয়ে চলে আসতে চাইছে। এছাড়া চা বাগান, হোটেল, দিন মজুরি, নিরাপত্তা রক্ষীর কাজের খোঁজেও নেপালিরা দার্জিলিংয়ে প্রতিদিন আসছে। একই ভাবে আসছে বাংলাদেশিরাও।

Advertisement

এর ফলে বিজনবাড়ি, সুকনা, সুখিয়াপোখড়ি, শালবাড়ির মতো এলাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্বাভাবিক বৃদ্ধির চেয়ে এনেকটাই বেশি বলে জেলা প্রশাসন দেখেছে। এখন তাই বসবাসের শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে সবদিক খতিয়ে দেখেই তা দেওয়া হবে। আবেদনকারী কত দিন দার্জিলিংয়ে রয়েছেন, পেশা, জমিজমার হিসাবপত্র দেখে ঠিক হবে। দেখা হবে আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ভোটার কার্ড, স্কুল সার্টিফিকেট ইত্যাদিও।

যদিও রাজ্যের এই সিদ্ধান্তে বিভিন্ন গোর্খা সংগঠন অপপ্রচারও করছে বলে খবর। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার হচ্ছে, ১৯৫০ সালের আগে যারা দার্জিলিংয়ে এসেছে তারাই কেবল পাহাড়ে থাকতে পারবে।
এর কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক জয়সী দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়,‘‘১৯৫০ এর আগে না এলে বসবাসের শংসাপত্র পাওয়া যাবে না, এমন কোনও নির্দেশ সরকার জারি করেনি। শুধু দেখে শুনে সন্তুষ্ট হয়ে শংসাপত্র দেওয়া হবে। ’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন