ফাইল চিত্র।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারের সঙ্গে আইনি সংঘাতে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর কেন্দ্রীয় সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে দু’টি আবেদন জমা পড়েছে। যার একটি করেছেন আইনজীবী প্রশান্তভূষণ। কেন্দ্রের ওই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে এর পর শীর্ষ আদালতে আবেদন করবে পশ্চিমবঙ্গের শিশু অধিকার কমিশনও।
কেন্দ্র সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে দাবি করেছে, রোহিঙ্গারা এ দেশে ‘বেআইনি অনুপ্রবেশকারী’ এবং জাতীয় সুরক্ষার পক্ষে ‘বিপজ্জনক’। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই বক্তব্যে সহমত নয়। তা ছাড়া, রাজ্যের শিশু অধিকার কমিশন মনে করে, মায়ানমার থেকে বিতাড়িত এবং এ দেশে শরণার্থী রোহিঙ্গা শিশু, নাবালক-নাবালিকাদের জোর করে ফের সে দেশে ফেরত পাঠানো অমানবিক। সেই কারণে তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে চায় ওই কমিশন। সুপ্রিম কোর্টে ওই মামলা করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে অনুমতিও চেয়েছে তারা। নবান্ন সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী কমিশনকে অনুমতি দিয়েও দিয়েছেন। তবে কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এক জন রোহিঙ্গা শিশুও যদি পুশ ব্যাকের শিকার হয়, তা আমরা মেনে নেব না। সে জন্যই সুপ্রিম কোর্টে আমরা মামলা করব।’’ মুখ্যমন্ত্রীও সোমবারই জানিয়েছিলেন, ‘‘আমি মনে করি, সকল কমনার্স জঙ্গি নয়। কেউ কেউ জঙ্গি থাকতে পারে। কোনও জঙ্গি থাকলে সরকারের উচিত ব্যবস্থা নেওয়া। কমনার্সরা যেন সাফার না করে। ইউএন ভার্ডিক্ট অনুযায়ী মানবিকতার সঙ্গে সমঝোতা করা উচিত হবে না বলে মনে করি।’’
বিজেপি অবশ্য গোড়া থেকেই জানিয়ে আসছে, তারা কেন্দ্রের সঙ্গে সহমত। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মঙ্গলবার ফের বলেন, ‘‘রোহিঙ্গারা মায়ানমারে উপদ্রব করেছে। তাই সরকার তাদের বিতাড়ন করেছে। এ রকম বিপজ্জনকদের আমরা জায়গা দেব কেন? মুখ্যমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে রোহিঙ্গারা যদি দলে দলে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে শুরু করে, উনি সামলাতে পারবেন তো?’’ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের দাবি, মায়ানমারের পুলিশ এবং সেনাই রোহিঙ্গাদের উৎখাত করতে শুরু করে। পাল্টা সংঘর্ষে জড়ায় তারাও।
বিরোধী কংগ্রেস এবং বাম অবশ্য রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিরোধী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর প্রশ্ন, ‘‘কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্ব ভারতেও তো অনেক জঙ্গি আছেন। তাঁদেরকেও কি ফেরত পাঠানো হবে?’’ আর বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জের নীতি মেনে রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর স্বীকৃতি দেওয়া উচিত।’’