প্রতীকী ছবি।
এত দিন ‘আত্মনির্ভর ভারত কর্মসূচি’র সুবিধা পেত শুধু ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প (এমএসএমই)। সেই গণ্ডি ছাড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার আওতায় থাকা অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদেরও এই সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। তাতে লকডাউন পর্বে ক্ষতির মুখে পড়া ব্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপে অতিরিক্ত সহজ ঋণ নিতে পারবেন এই ব্যবসায়ীরা। তবে এই ব্যবস্থা তাঁদের পক্ষে যাতে আরও লাভজনক হয়, সেই দায়িত্ব কেন্দ্র এ বার রাজ্য সরকারের উপরে ছেড়ে দিয়েছে। কেন্দ্রের কথা মানতে হলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের জন্য স্ট্যাম্প ডিউটি মকুব করতে হবে রাজ্যকে।
স্ট্যাম্প আইনের শিডিউল ১এ-র আওতায় ‘স্ট্যাম্প ডিউটি অন ইনস্ট্রুমেন্টস ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এ বলা রয়েছে, চুক্তি অনুযায়ী কোনও ঋণের ফেরত তিন মাসের বেশি সময়ে হলে প্রতি হাজার টাকায় দশ টাকা দিতে হয়। তিন মাসের মধ্যে ফেরতযোগ্য হলে তার পরিমাণ হয় অর্ধেক।
পর্যবেক্ষক শিবির এবং অনেক প্রবীণ আমলার চোখে এই ব্যবস্থা রাজ্যের পক্ষে কার্যত উভয়সঙ্কটের মতো। কারণ, কেন্দ্রের এই প্রস্তাব মানলে এক দিকে রাজ্যের আয় আরও কিছুটা কমবে, অন্যথায় অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ-সমস্যার দায়ভার এবং ক্ষতির দায় বর্তাবে রাজ্যের উপরেই। নির্বাচনী বছরের আগে এই বিষয়টি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নতুন অস্ত্র তুলে দেবে বিরোধীদের হাতে।
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব পঙ্কজ জৈন সম্প্রতি রাজ্যকে চিঠি দিয়ে জানান, লকডাউন পর্বে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি ক্ষেত্র এবং বিজ়নেস এন্টারপ্রাইজ়গুলির ব্যাপক ক্ষতি এবং ‘অপারেশনাল লায়াবিলিটিজ়’ বা দায় সামলানোর সুযোগ দিতে ‘ইমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিম’ চালু করেছে কেন্দ্র। তাতে বকেয়া ঋণের ২০% বা সর্বোচ্চ পাঁচ কোটি টাকার অতিরিক্ত ঋণ নির্ঝঞ্ঝাটে পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত ঋণের প্রশ্নে ব্যাঙ্কগুলির দ্বিধা কাটাতে নিশ্চয়তা দিচ্ছে কেন্দ্রই। প্রকল্পটির সুবিধা প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনার উপভোক্তাদের জন্যও চালু হয়েছে। এতে যাঁরা অতি অল্প টাকা ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করেছিলেন, তাঁরা ব্যবসা বাঁচাতে ১০ হাজার বা তার কম টাকার অতিরিক্ত ঋণও নিতে পারেন সহজে। চিঠিতে কেন্দ্রের বক্তব্য, সেই সুবিধার অন্তরায় হয়ে উঠছে রাজ্যের স্ট্যাম্প ডিউটির অতিরিক্ত খরচ। তাই কেন্দ্রের পরামর্শ, প্রকল্পের সুবিধা পেতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প ডিউটি প্রত্যাহার করা হোক। তবেই ছোট ব্যবসায়ীরা কেন্দ্রের মধ্যস্থতায় অতিরিক্ত ঋণ নিয়ে নিজেদের মুখ থুবড়ে পড়া ব্যবসাকে দাঁড় করাতে পারবেন।
২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে পশ্চিমবঙ্গের উপভোক্তাদের জন্য ২৬,৪৬২ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর হয়েছিল মুদ্রা প্রকল্পের আওতায়। যা তার আগের বছরের থেকে ২৯% বেশি। কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, বর্ধমান এবং মুর্শিদাবাদ মিলিয়ে অন্তত ২০ লক্ষ মানুষের অ্যাকাউন্টে ঋণের অর্থ জমা পড়েছে। চলতি অর্থবর্ষে এ-পর্যন্ত মঞ্জুর হয়েছে প্রায় ২৪৪৮ কোটি টাকার ঋণ।
প্রশাসনের অনেকের ব্যাখ্যা, লকডাউন পর্বে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বড় বা মাঝারি ব্যবসায়ীদের থেকেও এই ক্ষতি বেশি হয়েছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। আনলক পর্বে তাঁদেরও ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই চলছে। কেন্দ্রের দাবি, তাদের নিশ্চয়তা থাকায় ওই ব্যবসায়ীদের সামনে অতিরিক্ত সহজ ঋণ পাওয়ার সুবিধা রয়েছে। তাতে ব্যবসার ক্ষতিপূরণ হলে স্থানীয় অর্থনীতির চাকা আবার গড়াবে। লাভবান হবেন বহু মানুষ। এক কর্তার কথায়, “যিনি মুড়ি-চানাচুর ভেজে বিক্রি করেন, তাঁরও লাভ হতে পারে এই প্রকল্পে। সেই স্তর থেকে এমএসএমই-র আওতাভুক্ত সকলের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
মঙ্গলবার পর্যন্ত এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। অর্থসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদীকে ফোনে পাওয়া যায়নি। জবাব মেলেনি তাঁকে পাঠানো মোবাইল-বার্তারও।