আপেল-মিল দিতে গিয়ে সমস্যায় স্কুল

কিন্তু সরকারি নির্দেশ বলে কথা! ১ জুলাই থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৫টি পঞ্চায়েত এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয়েছে বিশেষ মিড ডে মিল। সে জন্য বরাদ্দও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর বলা হয়েছে, নতুন মেনুতে ফি মঙ্গলবার যোগ করতে হবে গোটা একটা আপেল।

Advertisement

দিলীপ নস্কর

ডায়মন্ড হারবার শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৮ ০৭:২২
Share:

পাঁচমিশালি তরকারি দিয়ে চেটেপুটে খিচুড়ি খাওয়ার পরে শেষপাতে মিলবে গোটা একটা আপেল!

Advertisement

মিড ডে মিলের এই মেনু শুনে জিভে জল আসতে পারে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের। কিন্তু আপেল জোগানোর কথা ভেবে চোখে জল আসার জোগাড় প্রধান শিক্ষকদের।

কারণ, আপেলের দর।

Advertisement

কিন্তু সরকারি নির্দেশ বলে কথা! ১ জুলাই থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ৫টি পঞ্চায়েত এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে চালু করা হয়েছে বিশেষ মিড ডে মিল। সে জন্য বরাদ্দও কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর বলা হয়েছে, নতুন মেনুতে ফি মঙ্গলবার যোগ করতে হবে গোটা একটা আপেল।

মিড ডে মিলের জন্য এমনিতে মাথাপিছু বরাদ্দ ৪ টাকা ১৩ পয়সা। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, পরীক্ষামূলক প্রকল্পের জন্য সেই টাকা বাড়িয়ে ১৩ টাকা ২৫ পয়সা করা হয়েছে। কর্তাদের আশা, এ-দিক ও-দিক করে আপেলের টাকা ঠিক জোগাড় হয়ে যাবে। আর পুষ্টিকর খাবার হিসাবে আপেলের কদর তো সকলেরই জানা।

‘‘বললেই হল’’— প্রস্তাব শুনেই খেপে গিয়েছিলেন কাকদ্বীপের এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তিনি জানালেন, মোটামুটি ১০০ গ্রাম একটা আপেলের বাজারদর অন্তত ১৫ টাকা। ‘‘তা হলে তো শুধু আপেলটুকুই হাতে ধরিয়ে বাড়ি পাঠাতে হয় ছেলেমেয়েগুলোকে’’— বিরক্ত হয়ে বললেন তিনি। আরও বললেন, ‘‘এ সব পরিকল্পনা করার আগে কর্তারা বাস্তব সমস্যার কথা ভাবেন না কেন কে জানে!’’

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও অবশ্য আশাবাদী। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের গরিব পড়ুয়াদের পুষ্টির কথা মাথায় রেখে পরীক্ষামূলক ভাবে আপেল দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। বরাদ্দের সমস্যা হলে বিষয়য়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা
নেওয়া হবে।’’

কিন্তু পুষ্টির জন্য দামি ফল আপেল কি সত্যিই জরুরি?

পুষ্টিবিদ স্মিতা রায়চৌধুরী জানালেন, দামি ফল হলেই যে তার কার্যকারিতা বেশি, তার কোনও মানে নেই। যে কোনও মরসুমি ফলই শরীরে জন্য উপকারী। পেয়ারা, কলা, আতা, আম— সবই দেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে দামও কম পড়ে। স্রেফ ছোলাভাজাতেও অনেক খাদ্যগুণ, জানাচ্ছেন তিনি। সপ্তাহে আর একটা ডিম বাড়িয়ে দিলেও মন্দ হয় না বলেও স্মিতা মনে করেন।

কিন্তু পুষ্টিবিদদের মত যা-ই হোক না কেন, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ, বারুইপুর, আলিপুর ও ক্যানিং মহকুমার পাঁচটি ব্লকের পাঁচটি পঞ্চায়েতের সমস্ত হাইস্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আপেলই খাওয়াতে হবে বলে নির্দেশ পাঠিয়েছে জেলা প্রশাসন। হাতেগোনা কয়েকটি স্কুল আপেল চালু করার ‘ক্ষমতা’ দেখালেও বাকিরা এখনও বিশ বাঁও জলে। রায়দিঘি ২ ব্লকের ভদ্রপাড়া গার্লস হাইস্কুল আপেল-মেনু চালু করেছে। স্কুল সূত্রের খবর, একটি আপেলের দাম পড়ছে প্রায় ২০ টাকা। টানা কত দিন এই মেনু দেওয়া যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান স্কুল কর্তৃপক্ষ। তবে আপেল পেয়ে ছেলেমেয়েরা খুশি

একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানালেন, মিড ডে মিলের খরচের হিসেব মাস শেষে পাঠানো হয় জেলায়। তারপরে মেলে বরাদ্দ। তত দিনে কেটে যায় বেশ কয়েকটা দিন। বাজারে ধারবাকি করে চালাতে প্রাণান্ত অবস্থা হয় বেশির ভাগ স্কুলের। অনেক সময় শিক্ষকেরা পকেটের টাকা দিয়েও চালু রাখেন মিড ডে মিল।

জেলার মিড ডে মিলের প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পরভিন অবশ্য জানালেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে বরাদ্দের টাকা সবটা খরচ হয় না। সেই টাকা দিয়েই ‘আপেল-মিল’ চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন