যন্ত্রে ভোট: নবান্ন ফেরাল কমিশনের প্রস্তাব

রাজ্য নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট করতে চেয়েছিল। তাতে না করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্ন চায়, ব্যালট পেপারেই হোক পঞ্চায়েত ভোট।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২১
Share:

রাজ্য নির্বাচন কমিশন ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট করতে চেয়েছিল। তাতে না করে দিয়েছে রাজ্য সরকার। নবান্ন চায়, ব্যালট পেপারেই হোক পঞ্চায়েত ভোট। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের আপত্তির কথা মেনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনও ব্যালট পেপারের মাধ্যমেই পঞ্চায়েত ভোট নিতে বাধ্য হচ্ছে। সেই মতো ব্লকে ব্লকে এখন ব্যালট বাক্স ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজও শুরু হয়েছে।

Advertisement

কেন কমিশনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিল রাজ্য।?

নবান্নের যুক্তি, অতীতে কখনও ভোটযন্ত্রের মাধ্যমে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ভোট হয়নি। এ বার ৬০ হাজার বুথে ত্রিস্তরে ভোট গ্রহণ করতে হলে প্রায় আড়াই লক্ষ ভোট যন্ত্র কিনতে হবে। রাজ্যের হাতে নিজস্ব ভোট যন্ত্র রয়েছে মাত্র ২৫ হাজার। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের হাতেও রয়েছে আরও ২৫ হাজার ভোটযন্ত্র। কিন্তু এই ৫০ হাজার যন্ত্র দিয়েও ভোট করানো সম্ভব নয়। নবান্নের এক কর্তার কথায়,‘‘নির্বাচন কমিশনের চাহিদা মতো ভোটযন্ত্র কিনতে হলে ৪০০ কোটি টাকা খরচ হত। সরকারের এখন এই টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই। কারণ, ভোটযন্ত্রে ভোট গ্রহণটা সরকার অপরিহার্য বলে মনে করছে না। সেই কারণে কমিশনের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যালট পেপারেই ভোট হবে।’’

Advertisement

নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরুর পর নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্র কুমার সিংহ জেলাশাসকদের জানিয়েছিলেন তিনি ইভিএমের মাধ্যমে ভোট করাতে চান। তা হলে অন্তত রিগিং-সন্ত্রাসের অভিযোগ কম হবে। ব্যালটে ভোট হলে সন্ত্রাস লাগামছাড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন কমিশনার। সেই মতো জেলাশাসকদের ভোটযন্ত্রের হিসাব চেয়ে পাঠান। কমিশন মনে করেছিল, অবাধ নির্বাচনের স্বার্থে ভোট যন্ত্রেই ভোট হওয়া উচিৎ। সরকার এক বার ৪০০ কোটি টাকা খরচ করলেও তা স্থায়ী সম্পদ হিসাবে রাজ্যের কাছেই থেকে যাবে। আর ব্যালট পেপার ছাপা বা ব্যালট বাক্স কেনার খরচও নেহাৎ কম হবে না। ফলে রাজ্য এক বার টাকা খরচ করে ভোট যন্ত্র কিনে ফেলুক।

কমিশনের যুক্তি মানতে চায়নি নবান্ন। এক কর্তার কথায়,‘‘ এত ভোট যন্ত্র কোথায় রাখা হবে? প্রায় ৫২ হাজার গ্রাম পঞ্চায়েত, ৯০০০ পঞ্চায়েত সমিতি এবং ৮৫০টি জেলা পরিষদ আসনের জন্য প্রয়োজনীয় আড়াই লাখ ভোট যন্ত্র রাখারই জা।গা নেই। এ জন্য যে সংখ্যক ব্যালট বাক্স লাগবে তাও এখনও রাজ্যে নেই। প্রতিবেশী রাজ্য থেকে আনতে।’’

তবে রাজ্যের আপত্তি উড়িয়ে দেওয়ার হিম্মত দেখাননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার। রাজ্যের পরামর্শ মেনেই পঞ্চায়েত আসনের সংরক্ষণ এবং সীমানা নির্ধারণের কাজ প্রায় শেষের মুখে। আগামী ৬ নভেম্বর তার খসড়া কমিশন প্রকাশ করে দেবে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজও পুরোদমে চলছে। আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। ফলে সেই তালিকা ধরেই পঞ্চায়েত ভোটে যাবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। এ সবের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কখন হবে পঞ্চায়েত ভোট? ফেব্রুয়ারিতে এগিয়ে আসবে না মে-জুনে নির্ধারিত দিনেই হবে ভোট? এ প্রশ্নের উত্তর অবশ্য একমাত্র রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন