ডুব: গঙ্গাসাগরে পুণ্যার্থীদের স্নান। সোমবার। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল
তীর্থ শুদ্ধায়ন।
এ বার গঙ্গাসাগর মেলার ‘ক্যাচলাইন’ বা সার-শব্দবন্ধ এটাই। মেলাপ্রাঙ্গণ থেকে সমুদ্রতট পর্যন্ত সর্বত্র পরিবেশ রক্ষার ব্যাপারে মেলায় অংশগ্রহণকারী ছোট-বড় দোকান থেকে সাধারণ মানুষ— সকলেই যে সজাগ, তার প্রমাণ পাওয়া গেল গঙ্গাসাগর ঘুরে। মেলার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে নিরন্তর আবেদন চলছে তথ্যকেন্দ্রে। ঘোষক নাগাড়ে বলে চলেছেন, ‘পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে ঈশ্বরেরও দর্শন মেলে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও সমুদ্রতট কোনও ভাবেই নোংরা করবেন না।’
সরকারি হিসেবে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৭ লক্ষ পুণ্যার্থী এসেছেন গঙ্গাসাগর মেলায়। এই মহামেলা যাতে নির্বিঘ্নে শেষ করা যায়, তা নিশ্চিত করতে নবান্ন থেকে সরাসরি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। জেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া ছাড়াও অন্তত ১০ জন মন্ত্রীকে পৃথক পৃথক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখছেন মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার নবান্ন থেকে বেরোনোর মুখে তিনি বলেন, ‘‘মেলা সুষ্ঠু ভাবে চালানোর জন্য আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি চালিয়েছি। কোনও অঘটন যাতে না-ঘটে, তার জন্য বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থা হয়েছে। সব সময় পরিস্থিতির উপরে নজর রাখছি।’’
মেলার বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা গেল, সরকারের ঘোষণাকে মান্যতা দিয়ে ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিকের কাপ ও প্যাকেট ছেড়ে পরিবেশবান্ধব কাগুজে প্যাকেট ব্যবহার করছেন।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘যে-কোনও ভাল উদ্যোগে সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের পাশে থাকার জন্য সাগরমেলায় অংশগ্রহণকারী সকলের কাছেই আমরা কৃতজ্ঞ।’’ পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় জানান, শীঘ্রই গঙ্গাসাগরকে ‘নির্মল মেলা’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে।
শনিবার রাত ২টো পর্যন্ত গঙ্গাসাগরের সৈকতে উপস্থিত থেকে নিরাপত্তার কাজকর্ম তদারক করেছেন মেলার দায়িত্বে থাকা পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি পর্যটকদের সঙ্গে কথাও বলেন, তাঁদের সমস্যার কথা শোনেন। বাড়ির কাছের কুম্ভমেলা ছেড়ে গঙ্গাসাগরে এসেছেন ইলাহাবাদের বাসিন্দা রমানন্দ নায়েক। স্ত্রীর সঙ্গে রবিবার রাতে এসেই ভোরে ডুব দিলেন প্রতিবন্ধী রমানন্দ। কুম্ভ ছেড়ে গঙ্গাসাগরে আসার কারণ জানতে চাইলে রমানন্দ বলেন, ‘‘১৫ বছর ধরে গঙ্গাসাগরে আসছি। কপিল মুনি যেখানে ধ্যান করেছিলেন, সেখানে না-এসে কি থাকা যায়!’’