—ফাইল চিত্র।
প্ররোচনামূলক বার্তার মাধ্যমে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা রুখতে রাজ্যের কয়েকটি প্রান্তে আপাতত ইন্টারনেট পরিষেবা এবং টেলিভিশন সম্প্রচার নিয়ন্ত্রণ করার নির্দেশিকা দিল নবান্ন। তবে মাধ্যমিকে প্রশ্নপাচার রুখতেই এই পদক্ষেপ কি না, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
মঙ্গলবার রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য একটি বিবৃতি প্রকাশ করে এই নির্দেশিকা দেন। রাজ্যের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত ওই পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। আপাতত জলপাইগুড়ি, মালদহ, বীরভূম, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, হুগলি, মুর্শিদাবাদ এবং পুরুলিয়ার কয়েকটি অঞ্চলে এই নির্দেশিকা কার্যকরী হবে।
রাজ্যের মানুষের সুরক্ষা তথা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে রাজ্য প্রশাসন সূত্রের দাবি। প্রশাসনের আশঙ্কা, পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে প্ররোচনামূলক বার্তার মাধ্যমে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দাদের নির্দিষ্ট তথ্যের উপর ভিত্তি করেই এই পদক্ষেপ করা হয়েছে বলে দাবি করেছে রাজ্য প্রশাসন। যদিও প্রশাসনেরই অন্য একটি সূত্রের দাবি, সম্প্রতি মাধ্যমিক পরীক্ষায় আরও প্রশ্নপত্র পাচার এড়ানো রুখতেই এই নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। তবে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন দুপুর ১২টা থেকে ৩টে পর্যন্ত ওই নেট পরিষেবা নিয়ন্ত্রণের এই নির্দেশিকা কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। কারণ, গত কয়েক দিনের মতো এ দিনও হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমে মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র পাচার হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: সল্টলেকের বাড়িতেই আত্মঘাতী প্রাক্তন আইপিএস
এই নির্দেশিকা কার্যকরী করার আগে থেকেই অবশ্য রাজ্যের বেশ কয়েকটি প্রান্তে এ দিন দুপুরবেলা ইন্টারনেট পরিষেবার বন্ধ থাকে। বনগাঁর বাসিন্দা পরেশ দাস জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে ইন্টারনেটে সংযোগ করতে পারছিলেন না তিনি। তাঁর কথায়, “এ দিন সকাল ১১টা ৪০ মিনিট নাগাদ হঠাৎই ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাড়ে ৩টে পর্যন্ত তা বন্ধ ছিল।” প্রায় একই অভিজ্ঞতা হয়েছে ধূপগুড়ির বাসিন্দা মিন্টু চৌধুরীর। তিনি বলেন, “সাড়ে ১১টা নাগাদ কানেকশন বন্ধ হয়ে যায়। ৩টে ৪০ মিনিট নাগাদ ফের কানেকশন আসে।”
আরও পড়ুন: ভোটের মুখে ফের কল্পতরু কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের ডিএ বাড়ল তিন শতাংশ
১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর থেকেই রাজ্যের নানা প্রান্তের মানুষ বিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ। কাশ্মীরিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টের ফলে সাধারণ মানুষদের হেনস্থা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে। ওই হামলা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজস্ব মতামত প্রকাশের পর রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের উপর চড়াও হয়ে মারধর, এমনকি, খুন-ধর্ষণের মতো হুমকিও দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এ নিয়ে সোমবারই রাজ্য পুলিশকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রচেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবি করে তা রুখতে মমতা বলেছিলেন, ‘‘বিদ্বেষমূলক প্রচার, গুজব ছড়ানো রুখতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।’’
ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের পর দিনই নবান্নের তরফে এই নির্দেশিকা দেওয়া হল। যদিও এটি প্রশ্নপত্র পাচার করা রুখতে এ পদক্ষেপ কি না, তা নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসেনর শীর্ষ কর্তারা।