জঙ্গলমহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে চিড় ধরা ভোটব্যাঙ্ক মেরামত করতে কোমর বেঁধে নামছে শাসক শিবির। পরিবেশ-বান্ধব বাস চালু করার সঙ্গে সঙ্গে তাই সেখানকার বিভিন্ন জায়গায় কাঠের জীর্ণ সাঁকো বদলে ফেলার উদ্যোগ চলছে। এ বার সেখানে কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা হবে।
রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে কাঠের নড়বড়ে সাঁকো রয়েছে। কোথাও কোথাও কংক্রিট থাকলেও সেটি এত সঙ্কীর্ণ যে, ছোট গাড়ি চলাচলেও সমস্যা হয়। এই অবস্থায় পর্যাপ্ত পরিসরের কংক্রিটের সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের সেচ দফতর। আর এ ক্ষেত্রে অন্য জেলা নয়, জঙ্গলমহলের সাঁকোকেই চিহ্নিত করেছে তারা। জঙ্গলমহলের সঙ্গে আরও দু’-একটি জেলা মিলিয়ে ৯৩৫টি কাঠের সাঁকো চিহ্নিত করা হয়েছে। তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫৩৪টি কাঠের সাঁকোকে কংক্রিটে পরিণত করবে সেচ দফতর। ১০০টি সেতুর জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ শেষ। বাকি সেতুগুলির ক্ষেত্রে সেই কাজ শুরু হবে বর্ষার পরেই। মাটি পরীক্ষা, দরপত্র ইত্যাদি শেষ করে সেতু তৈরির মূল কাজ শুরু করতে ডিসেম্বর গড়িয়ে যাবে বলে কর্তাদের ধারণা।
সেচ দফতর সূত্রের খবর, একটি বিশেষ খাত থেকে এই সেতু তৈরির অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেব্রুয়ারিতে লোকসভা ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করা হতে পারে। আর সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে ডিসেম্বরে। দুইয়ের মধ্যে যোগসূত্রই দেখছেন রাজ্যের রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের সাঁকো বদলের মধ্য দিয়ে এই কাজ শুরু হবে। কয়েকটি সাঁকো বদলানো হবে বর্ধমান, বীরভূমেও। আগামী তিন বছরের মধ্যে কংক্রিটের সেতু তৈরির প্রকল্পটি শেষ করার কথা। অন্যান্য জেলা ছেড়ে জঙ্গলমহলে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের উদ্যোগ কেন? এক আধিকারিকের বক্তব্য, এই কাজটা আরও আগেই করা উচিত ছিল। ‘‘কোনও এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা দরকার। কাঠের সেতুতে তো ছোট গাড়ি, অ্যাম্বুল্যান্স চলতে পারে না! তাই কংক্রিটের সেতু প্রয়োজন,’’ বলেন সেচমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র।
মন্ত্রীর বক্তব্যের পাশাপাশি এর সঙ্গে পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গলমহলে ঘাসফুলের প্রত্যাশিত বিকাশ না-হওয়ার সম্পর্ক দেখছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। তাদের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের ক্ষতে মলম লাগাতেই দ্রুত সেতু বদলের ভাবনা! সেটা অস্বীকার করছেন না শাসক শিবিরের নেতারা। এক নেতার কথায়, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুর-ঝাড়গ্রাম ভিতরের এলাকা এখনও অবহেলিত। সাঁকো ব্যবহার করেন অসংখ্য মানুষ। তার পরিবর্তন প্রয়োজন। পর্যাপ্ত উন্নয়ন সর্বত্র পৌঁছয়নি।’’
পঞ্চায়েত ভোটের পরে জঙ্গলমহলে ডাল চাষের বন্দোবস্ত করেছে রাজ্য সরকার। ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ায় সরকারি বাস বাড়ানো হয়েছে। আবার জঙ্গলমহলকে ডিভিশন করে অগস্টে পরিবেশ-বান্ধব বাস চালু করছে পরিবহণ দফতর। সব মিলিয়ে জঙ্গলমহলের মন পেতে মরিয়া রাজ্য সরকার।