বাদুড়িয়া নিয়ে তদন্ত কমিশন গঠন রাজ্যের

বসিরহাটে দাঙ্গার পিছনে যে বিজেপির পুরোদস্তুর মদত রয়েছে, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তের ও-পারের ঘটনা, ভোজপুরি সিনেমার অংশ ভিডিও করে বাংলার বলে চালানো হয়েছে। বিজেপি অফিসে সেগুলো সাংবাদিক বৈঠক করে দেখানো হয়েছে। এটা অপরাধ।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ০৩:৫০
Share:

সেনা-টহল: শনিবার বসিরহাটে ছবিটি তুলেছেন নির্মল বসু

বসিরহাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পিছনে কাদের মদত ছিল তা জানতে বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করছে রাজ্য সরকার। কমিশনের মাথায় থাকবেন কলকাতা হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৌমিত্র পাল। শনিবার নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই বিচারবিভাগীয় কমিশন তৈরির সিদ্ধান্ত। এই ক’দিনে বসিরহাট, বাদুড়িয়ায় কার কী ভূমিকা ছিল, তার অনেক তথ্য সরকারের কাছে আছে। কমিশন গঠনের পরে সরকার সেই সব ‘ইনপুট’ দিয়ে দেবে।’’

Advertisement

কমিশনের রিপোর্ট কাদের বিরুদ্ধে যাবে, তা জানতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দেখতে চাই কোন কোন শক্তি এদের সাহায্য দিয়েছে, কোন কোন মিডিয়ার স্টিং অপারেশন আছে, কারা পরিকল্পনা করে নিয়মিত গুজব ছড়িয়েছে, যারাই করুক না তাদের বিরুদ্ধে সরকার কড়া পদক্ষেপ করবে।’’ মুখ্যমন্ত্রী জানান, দু’-তিনটি মিডিয়ার ভূমিকা ভাল ছিল না। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন: আতঙ্ক সরিয়ে রেখে স্বস্তিতে বসিরহাটবাসী

Advertisement

বসিরহাটে দাঙ্গার পিছনে যে বিজেপির পুরোদস্তুর মদত রয়েছে, তা এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘সীমান্তের ও-পারের ঘটনা, ভোজপুরি সিনেমার অংশ ভিডিও করে বাংলার বলে চালানো হয়েছে। বিজেপি অফিসে সেগুলো সাংবাদিক বৈঠক করে দেখানো হয়েছে। এটা অপরাধ।’’

প্ররোচনা তো বটেই, বসিরহাটে দাঙ্গার পিছনে যে কেন্দ্রের শাসক দলের প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল, তা বোঝাতে আরও এক ধাপ এগিয়ে মমতা বলেন, ‘‘আগাম পরিকল্পনা করে এ সব ঘটানো হয়েছে। সীমান্তকে অশান্ত করে তোলাই ছিল এর মূল উদ্দেশ্য। আমি জানি, এর পিছনে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে, যাদের সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক ভাল।’’ কোন বিদেশি শক্তির মদত ছিল, তা খোলসা না করলেও কাদের দিকে এই অভিযোগের তির, মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তার স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বাংলাদেশের সীমান্ত খুলল কী করে? কী করে ও পারের লোক এসে এ পারে দাঙ্গা করে চলে গেল? সীমান্তের দায়িত্ব তো কেন্দ্রের হতে। এর পরেও বিশ্বাস করতে হবে এর পিছনে পরিকল্পনা নেই?’’

মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য, ‘‘দু’টো সংগঠনকে (হিন্দু সংহতি এবং এমআইএম) ইতিমধ্যে কালো তালিকাভুক্ত করেছি। বিজেপি বিহারে টাকা দিয়ে ওদের কাজে লাগিয়েছিল।’’

বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী যেখানেই গোলমাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, সেখানেই বিজেপি এবং বিদেশি শক্তির হাত দেখেন। পাহাড়েও অশান্তি শুরুর এক সপ্তাহ পরে তিনি এই অভিযোগই করেছিলেন। এ সব ছেঁদো কথায় রাজনীতি হলেও মানুষের ভরসা পাওয়া যায় না। ওঁর হাতে পুলিশ-প্রশাসন। উনি দোষীদের ধরে সাজা দিচ্ছেন না কেন?’’

বাদুড়িয়া কাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। তা নিয়ে দিলীপবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বসিরহাটের ঘটনা নিয়ে জনস্বার্থ মামলা হয়েছে। সেখানে কোনও কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্তের আর্জি জানানো হয়েছে। সোমবার ওই মামলার শুনানি। তাই মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি বিচারবিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিলেন।’’ দিলীপবাবুর অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী বসিরহাট-কাণ্ডের সমাধান চান না। তাই তিনি বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন না এবং কেন্দ্রের পাঠানো ৮ কোম্পানি বাহিনীর মধ্যে মাত্র ৪ কোম্পানি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকছেন।

তবে সোশ্যাল মিডিয়ার যে অপব্যবহার হচ্ছে, তা মেনে নিয়েছেন দিলীপবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কেউ এই ধরনের কাজে যুক্ত থাকলে তাঁকে আমরা বাঁচাব না। এ সব ক্ষেত্রে দোষীদের শাস্তি হওয়া উচিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন