বেনামি লেনদেন ঠেকাতে আধার, মানবে না রাজ্য

এ রাজ্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য এখনও পর্যন্ত আধার নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়নি। ফলে ওই নেতার হাল আমলে কেনা নামে-বেনামে সম্পত্তির নথি জোগাড় করতে গিয়েও অনেক কসরত করতে হয়েছে বলে তাঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৪২
Share:

নারদ তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি কলকাতার এক রাজনেতার ৪০টির বেশি সম্পত্তির হদিশ পেয়েছেন। যার অধিকাংশই অবশ্য বেনামি। কিন্তু সেই সম্পত্তির নথিপত্র জোগাড় করতে কালঘাম ছুটেছে তদন্তকারী অফিসারদের। কারণ, এ রাজ্যে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য এখনও পর্যন্ত আধার নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক হয়নি। ফলে ওই নেতার হাল আমলে কেনা নামে-বেনামে সম্পত্তির নথি জোগাড় করতে গিয়েও অনেক কসরত করতে হয়েছে বলে তাঁদের কেউ কেউ জানিয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: বাগবাজারে নিবেদিতার বাড়ির উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী

সারা দেশে বছর খানেক ধরে আধার নম্বর দিয়ে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশন শুরু হলেও এ রাজ্যে তা হচ্ছে না। ফলে শুধু ওই রাজনেতাই নয়, নিয়মের ফাঁক গলে কত শত সম্পত্তি যে বেনামে রেজিস্ট্রেশন হয়ে যাচ্ছে তার কোনও খোঁজ সরকারের কাছে নেই বলেই জানা গিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকার চাইলেও রাজ্য সরকার সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশনে আধার নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করবে না। নবান্ন মনে করে, যতদিন না ১০০% মানুষের আধার কার্ড হচ্ছে, ততদিন জমি-বাড়ি কেনাবেচায় আধার বাধ্যতামূলক করা যাবে না। দেশের অন্য রাজ্যে তা চালু হলেও এখানে তা না মানার অবস্থানেই দৃ়ঢ় নবান্ন।

Advertisement

সরকারি সূত্রের খবর, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের অধীন ডিপার্টমেন্ট অব ল্যান্ড রিসোর্সেস বেনামি সম্পত্তি এবং ভুয়ো লেনদেনের উপর নজরদারি চালাতে সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনে আধার নম্বর এবং আঙুলের ছাপ নেওয়ার কথা বলছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে এ নিয়ে নির্দিষ্ট নির্দেশ জারি করে তা চালু করতে বলে কেন্দ্র। সেই কারণে প্রতিটি সাব-রেজিস্ট্রারের অফিসে আধার নথি সম্বলিত ব্যবস্থা গড়ে তুলতে বলা হয়। পাশাপাশি কারও আধার নম্বর না থাকলে সেখানেই ‘তৎকাল’ ভিত্তিতে তা তৈরির জন্য আধার সেন্টার গড়ার কথাও বলেছে দিল্লি। যা এখনই মানছে না রাজ্য।

কেন দিল্লি জমি, বাড়ি কেনাবেচায় আধার চাইছে?

গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়,‘‘১৯০৮ সালের রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯৮৮ সালের প্রোহিবিশন অফ বেনামি প্রপার্টি ট্র্যানজ্যাকশন আইন এবং ২০০০ সালের ইনফরমেশন টেকনোলজি আইনে জমি-বাড়িসহ যে কোনও সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশনে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন। কিন্তু বেড়ে চলা বেনামি সম্পত্তি রুখতে আধার নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন বড় প্রতিরোধক হতে পারে। সেই জন্য সারা দেশে এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে চায় দিল্লি।’’

কিন্তু রাজ্যের বক্তব্য, ভোট দেওয়ার জন্য যে ১৪ দফা পরিচয়চত্র দেখা হয়, তার যে কোনও একটি দেখালেই রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। গ্রামের মানুষের অনেকের কোনও সচিত্র পরিচয়পত্র নেই। তাঁরা কি তা হলে সম্পত্তি কেনা বা বিক্রি করবেন না? ফলে সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশনে আধার নম্বর দেওয়াটা আপাতত মানবে না রাজ্য। কারণ, আধার নম্বর দিলেই বেনামি সম্পত্তি ঠেকানো যাবে এমন যুক্তি মানা যায় না।

যা শুনে দিল্লি জানিয়েছে, আধার নম্বর দিলেই বেনামি সম্পত্তি বন্ধ হয়ে যাবে এমন নয়, কিন্তু তা অনেকটাই কমে যাবে। কারণ, আধার নম্বর দেওয়া থাকলে তদন্তকারী সংস্থা সহজেই বুঝতে পারবেন কোনও এক সম্পত্তির ক্রেতা এবং তাঁর রোজগার সাজুয্যপূর্ণ কি না।

এক কর্তার কথায়, ‘‘এমন অনেকে কোটি টাকার সম্পত্তি কিনেছেন যিনি নিজে ইন্দিরা আবাসের বাড়ি পেয়েছেন। বার্ধক্য ভাতা পাওয়া উপভোক্তার নামেও কোটি কোটি টাকার জমি-বাড়ি কেনা হয়েছে। এ সব ধরা পড়েছে আধার নম্বর দৌলতেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন