শুক্রবার সকাল ন’টা। দিল্লিতে সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বলের সঙ্গে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ করাই ছিল কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দুর্গাপুজোর বিসর্জন নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা বা ‘স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন’-এর ফাইলও তৈরি করে ফেলেছিলেন কল্যাণ। সকাল সাড়ে দশটায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে মামলার দ্রুত শুনানির আর্জি জানানোর কথা ছিল। সেই রণকৌশল ঠিক করার জন্যই দুই আইনজীবী কপিল ও কল্যাণের বৈঠকে বসার কথা ছিল।
বৈঠকে যাওয়ার আগে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে হাইকোর্টের রায়টা খুঁটিয়ে পড়তে শুরু করেন কল্যাণ। আটকে যান ১৭ নম্বর পাতায় এসে। প্রথম অনুচ্ছেদেই লেখা রয়েছে, ৩০ সেপ্টেম্বর বা ১ অক্টোবর রাজ্য সরকার বিসর্জন ও মুসলমানদের তাজিয়া যাওয়ার পৃথক রাস্তা ঠিক করে দিতে পারে, যদি সেই বিসর্জন অনুমোদনযোগ্য হয় (ইফ দ্য ইমার্সন ইজ ফাউন্ড পারমিসিবল)। শব্দবন্ধটি দ্বিতীয় বার পড়েন কল্যাণ। বুঝতে পারেন, রাজ্য সরকারের হাতেই বিসর্জনের অনুমতি দেওয়া বা না-দেওয়ার ক্ষমতাটি রেখেছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায়ের কপিটি নিয়েই সিব্বলের বাড়ি রওনা হন কল্যাণ। তত ক্ষণে সিব্বলও রায়টি খুঁটিয়ে পড়ে ফেলেছেন। তাঁরও দাবি— হাইকোর্টের রায় আদৌ রাজ্য সরকারের বিপক্ষে নয়। কল্যাণ পৌঁছতেই সিব্বল বলেন, ‘‘ডোন্ট গো!’’ সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার দরকার নেই।
কল্যাণ বলেন, ‘‘হাইকোর্টের রায়ের কপিটা অনেক রাতে হাতে পাই। ভোরবেলা সে’টি ভালো করে পড়েই বুঝতে পারি, হাইকোর্টের রায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বলে যা বলা হচ্ছে, সেটা আদৌ ঠিক নয়। কপিল সিব্বলও তাতে সহমত হন।’’
দুই আইনজীবী বিষয়টি বোঝার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করে জানানো হয়। তিনি বুঝতে পারেন, চাইলে স্পর্শকাতর এলাকায় বিসর্জনের অনুমতি না-ও দিতে পারে রাজ্য সরকার। কিন্তু যেখানে কোনও অশান্তি বাধার সম্ভাবনা নেই, সেখানে বিসর্জনের অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
মমতা আশ্বস্ত হন। সিদ্ধান্ত হয়ে যায়, সুপ্রিম কোর্টে আর মামলা করবে না রাজ্য সরকার।
রাজ্যের আইনজীবীরা বলছেন, এতে আর একটি লাভও হল। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলে হাইকোর্টের বিচারপতিরা রুষ্ট হন। এ ক্ষেত্রে হাইকোর্টকে চটানোও হল না।