গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ক’দিন আগেই খোদ প্রধানমন্ত্রীর ‘যোগগুরু’র ভূমিকায় তোলা ভিডিয়ো এখন ভাইরাল। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাইরাল মোদীজির শিষ্যেরা কে কত ফিট, তার ভিডিয়ো। কিন্তু, এ রাজ্য থেকে মোদীজির যোগ শিষ্য খুঁজে পাওয়া দুস্কর।
শুরুটা হয়েছিল কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন সিংহ রাঠৌরের ‘হাম ফিট তো ইন্ডিয়া ফিট’ক্যাম্পেন দিয়ে। বিরাট কোহালি সেই ‘ফিটনেস চ্যালেঞ্জ’ স্বীকার করে নিয়ে নিজের ফিটনেসের ভিডিয়ো শেয়ার করেন সোশ্যাল সাইটে। আর তার পরেই যোগগুরুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং।
আর তারপরেই দেশজুড়ে শুরু প্রতিযোগিতা। টুইটারে ভিডিয়োর বন্যা। সবাই প্রমাণ করতে মরিয়া তাঁরা কতটা ‘ফিট’। এঁদের মধ্যে একটা বড় অংশই অবশ্য শীর্ষ স্তরের আমলা। রয়েছেন পুলিশ কর্তারাও।
যেমন মধ্যপ্রদেশ পুলিশের নকশাল দমন শাখার অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব কুমার সিংহ। আটান্ন বছরের এই প্রবীণ আইপিএসকে এ রাজ্যের অনেকেই চেনেন, খাগড়াগড় বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তদন্তের সূত্রে। সেই সময়ে তিনি জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় আইজি পদে ছিলেন। জুন মাসের ১৪ তারিখ তাঁর পোস্ট করা ভিডিয়ো এখন ভাইরাল।
আরও পড়ুন: কয়েকশো যাত্রীর উপস্থিতিতে স্বামীর সামনে স্ত্রীর শ্লীলতাহানি সোদপুর স্টেশনে
সঞ্জীব তাঁর টুইটে নিজের পরিচয় দিয়ে লিখেছেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ফিটনেস চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নিজের ফিটনেসের ছবি পোস্ট করছেন, অন্যদের অনুপ্রাণীত করতে। সেই ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে সঞ্জীব সিংহ প্যারালাল বারের কসরত দেখাচ্ছেন। আবার কখনও দড়ি নিয়ে বা পিঠে চল্লিশ কেজি ওজন নিয়ে হাতের উপর ভর করে চলছেন।
ঠিক একই ভাবে ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশের শীর্ষ কর্তা নভনীত সেকেরা। তাঁর পোস্ট করা ভিডিয়োতে শারীরিক কসরতের পাশাপাশি একটি নাতিদীর্ঘ বক্তৃতাও আছে, যেখানে তিনি বার বার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এই তালিকায় পঞ্জাবের বিভু রাজ, রাজস্থানের ডিজিপি ওপি গালহোত্রা থেকে শুরু আরও হাজারো পুলিশ কর্তারা রয়েছেন। যাঁরা কেউ জিমন্যাসিয়ামে কসরত করছেন নয়তো ট্রাক্টরের আস্ত টায়ার দু’হাতে তুলে নিজেদের শারীরিক সক্ষমতা প্রমাণ করছেন।
এই তালিকায় গোটা ভারতের বিভিন্ন পুলিশ কর্তা থাকলেও এ রাজ্যের পুলিশ কর্তারা অনুপস্থিত!
আরও পড়ুন: তোলাবাজি, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বরদাস্ত হবে না, দলকে কড়া বার্তা দিলেন মমতা
তবে কি এ রাজ্যের পুলিশ কর্তারা তেমন ফিট নন? এ প্রশ্ন এক শীর্ষ পুলিশ কর্তাকে করতেই এক নিঃশ্বাসে এক ডজন আইপিএসের নাম করলেন। তাঁর দাবি,‘‘এরকম অনেক আইপিএস আছেন যাঁরা এই ভিডিয়ো পোস্ট করা অফিসারদের থেকে অনেক ফিট।’’অন্য এক পুলিশ কর্তা বলেন,“হাওড়া সিটি পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা, ২০০২ ব্যাচের আইপিএস, তিনি নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। আইপিএস মহলে তিনি খুব ফিট হিসেবে পরিচিত।” হাওড়ার আরও এক পুলিশ কর্তা, ২০০৫ ব্যাচের এই আইপিএস মাঝে মাঝেই এর আগে নিজের শারীরিক কসরত এবং ফিটনেসের ছবি ফেসবুকে দিতেন। রাজ্য পুলিশের এক এডিজি পুলিশ মহলেই প্রশংসিত তাঁর ব্যায়ামপ্রীতির জন্য। এক সময়ে জিমন্যাসিয়ামে ব্যায়ামের ছবি তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি ছিল।
অর্থাৎ এ রাজ্যেও অনেক পুলিশ কর্তা আছেন যাঁরা বাকিদের মতো ফিট, কিন্তু মোদীজির ফিটনেস চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি নন। উল্টে মোদীর যোগ নিয়ে মাতামাতির আগে যাঁরা ফেসবুকে নিজেদের ফিটনেসের ছবি দিতেন, তাঁরাও সে সব একদম বন্ধ করে দিয়েছেন।
কিন্তু কেন?
আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালেই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,“যোগ গোটা বিশ্বকে একত্রিত করার শক্তি। আমরা ব্যক্তি হিসাবে বা সমাজে যে সমস্যার মুখোমুখি হই, তার সঠিক সমাধান করতে পারে যোগ।”
মোদীর এই তত্ত্বে আদৌ ভরসা নেই এ রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের। এক আইপিএস বলেন,“যোগ নিয়ে এই মুহূর্তে উৎসাহ দেখালে সমস্যা মেটার বদলে বাড়বে।” অন্য এক পুলিশ কর্তার সোজা জবাব, ‘‘মোদীর যোগের তালে তাল মেলালে দিদির রাজ্যে বিয়োগের আশঙ্কা বেশি। তাই এ রাজ্যের পুলিশ কর্তাদের কাছে মোদীর যোগ বার্তা যোগসর্পর মতোই ভয়ঙ্কর।’’