West Bengal Lockdown

রেশন দোকানে ভিড়, লাঠিও চলল বিক্ষোভে

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও জানিয়েছেন, একবারে এক মাসের রেশন দিতে বলা হয়েছে। তবে ডিলারদের অনেকেরই দাবি, সকলের মজুতের পরিমাণ সমান নয়।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০২০ ০৪:১২
Share:

সোনারপুরে রেশনের দোকানে ভিড়।—ছবি পিটিআই।

চুলোয় গেল পারস্পরিক দূরত্বের সতর্কতা। বুধবার সকালে রেশন দোকানগুলি খোলার আগে থেকেই রাজ্যের বেশির ভাগ জায়গায় দেখা গেল গা ঘেঁষাঘেঁষি করে লাইন। পাশাপাশি সরকারের ঘোষণামতো পরিমাণে সামগ্রী না মেলার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভও চলল বেশ কয়েকটি জায়গায়। তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে পুরুলিয়া জনতা-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ এবং উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘিতে ১৭ কুইন্ট্যাল গম ‘পাচারের’ সময়ে উদ্ধারের ঘটনা। দিনের শেষে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সকলে দূরত্ব রেখে দোকানে আসার আবেদন জানান। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, যে রেশন ডিলারের যেমন মজুত রয়েছে, তিনি সেই বুঝেই রেশন দেবেন। পুলিশ প্রায় সর্বত্রই নজর রাখছে, সে কথাও জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আরও জানিয়েছেন, একবারে এক মাসের রেশন দিতে বলা হয়েছে। তবে ডিলারদের অনেকেরই দাবি, সকলের মজুতের পরিমাণ সমান নয়। তাই দোকান খুলে কম দিলে বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। বস্তুত, প্রয়োজনীয় সামগ্রি আসেনি— এই দাবি করে বন্ধ ছিল পূর্ব বর্ধমান বেশির ভাগ রেশন দোকান। একই ছবি দেখা গিয়েছে নদিয়ার নবদ্বীপেও। যদিও খাদ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘ধৈর্য ধরুন, সকলে রেশন পাবেন।’’ কিন্তু বুধবার রেশন বিলির সময়ে রাজ্যের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই কথা মাথায় রাখেননি উপভোক্তারা। কম পণ্য সামগ্রী পাওয়ার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখানো হয় উত্তর ২৪ পরগনা, বীরভূম, উত্তর দিনাজপুর, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন জায়গায়। মুর্শিদাবাদের প্রায় সর্বত্র শান্তিতে রেশন বিলি হলেও রানিতলায় বিক্ষোভ দেখানো হয়। তবে সব থেকে বড় ঘটনাটি ঘটে পুরিলিয়ার বোরো থানার আঁকড়ো গ্রামে। সেখানে বিক্ষোভ সামাল দিতে পুলিশ এলে তাদের লক্ষ করে ইট ছুড়তে শুরু করে উন্মত্ত জনতা। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ পাল্টা লাঠি চালায়। একই সঙ্গে যে রেশন দোকান ঘিরে গোলমাল, সেই ডিলারকে সরিয়েও নিয়ে যায় পুলিশ। একই ভাবে আলিপুরদুয়ারের মাঝেরডাবরিতে এক রেশন দোকানেও ডিলারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হওয়ায় তাঁকে আটক করে শামুকতলা থানার পুলিশ। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতেই পণ্য পাচারের অভিযোগ করণদিঘিতে। টুঙ্গিদিঘি থেকে ১৭ কুইন্ট্যাল গম বোঝাই একটি ভ্যান আটক করে পুলিশ। উত্তর দিনাজপুর খাদ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, কোনও ডিলার এর পিছনে যুক্ত থাকলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দিনভর রেশন দোকানে কিন্তু ভিড় করেই পণ্য নিলেন উপভোক্তারা। ফলে সামাজিক দূরত্ব রাখার যে আবেদন বারবার করছে রাজ্য প্রশাসন, তা বলতে গেলে মানাই হল না বেশির ভাগ জায়গায়। ব্যতিক্রম মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলা। দুই জেলাতেই হয় উপভোক্তাদের কুপন দিয়ে সময় ভাগ করে রেশন নিতে আসতে বলা হয়, নয়তো লক্ষ্মণরেখা টেনে এবং তা কঠোর ভাবে মানতে বাধ্য করে রেশন দেওয়া হয়। হুগলি জেলার কয়েকটি রেশন দোকানে মুখে মাস্ক এবং হাতে দস্তানা পরেও রেশন দিলেন কর্মীরা। কিন্তু গোটা রাজ্যে এই ধরনের উদাহরণ আর মোটে হাতে গোনা।

Advertisement

পরিস্থিতি থেকে বিপদ বুঝেই এ দিন খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সকলের কাছে আমাদের আবেদন, দূরত্ব বজায় রাখুন। একে অপরের গায়ে উঠে কেন রেশন নিচ্ছেন? একটু বুঝুন।’’ তাঁর আশ্বাস, ‘‘সবাই রেশন পাবেন। এখন রেশন দোকান নিয়মিত খোলা থাকবে।’’ ভিড় কমানোর উপায় বাতলে দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যদি দেখেন, লাইনে অনেক লোক রয়েছে। তা হলে বিকেলের দিকে গিয়ে রেশন নিন।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন