West Bengal Lockdown

সাইকেলে ও হেঁটে ৪২০ কিমি অতিক্রম করে অবশেষে বাড়িতে

শমশেরগঞ্জের নবাব কী করে এলেন এতটা রাস্তা?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০৩:২৮
Share:

এ ভাবেই ঝাড়খণ্ড থেকে ফেরেন মুরারইয়ের দুই শ্রমিক। নিজস্ব চিত্র

সারা দেশজোড়া লকডাউন। দোকানপাট বন্ধ। হাতের টাকা পয়সা ফুরিয়ে গিয়েছে। খাবার নেই। বাড়ির লোকজনের জন্য উদ্বেগ। বিহারের পটনার ছোট্ট ঘরে দু’দিন ধরে ছটফট করেছেন মুর্শিদাবাদের শমশেরগঞ্জের বোগদাদনগর গ্রামের নবাব শেখ। শেষ পর্যন্ত বুধবার রাতেই সিদ্ধান্ত নেন, যে করে হোক বাড়ি ফিরবেন। বৃহস্পতিবার ভোর হতে না হতে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ৪২০ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে শনিবার রাতে চলে আসেন শমশেরগঞ্জে। তার পরেও সোজা বাড়ি যাননি। রাত আটটা নাগাদ অনুপনগর হাসপাতালে পৌঁছন। সেখানে নিজের পরীক্ষা করান। প্রাথমিক চিকিৎসাও হয়। তার পরে ঘরে যান।

Advertisement

রবিবার ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা থেকে বীরভূমের পাইকর থানার বুরহা ও তিনকর গ্রামে বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেন কিনু মাল ও জিতেন মাল নামে দুই যুবকও। গোড্ডায় টিনের বাক্স বানানোর কাজ করতেন তাঁরা। গোড্ডা থেকে ১৫৮ কিমি পথ হেঁটে মুরারইয়ে পৌঁছলে সেখানকার কয়েক জন যুবক দেখেন, টানা এতটা হাঁটায় তাঁরা রীতিমতো অসুস্থ। ওই যুবকেরাই তাঁদের চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিনু বলেন, ‘‘বুধবারই খাবার শেষ হয়ে যায়। তাই হেঁটেই বাড়ি ফিরেছি।’’ নিজেদের জিনিসপত্র ঝাঁকায় করে মাথায় বয়ে নিয়ে এসেছেন। খাবার বলতে ছিল মুড়ি আর জল। জিতেনবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে পুলিশ ধরে। তারা ফিরে যেতে বলেছিল। তখন ভেবেছিলাম গ্রামের পথ ধরে যাব। তাতে অচেনা লোক দেখে বাধা দেন নানা গ্রামের লোকজন। বাধ্য হয়ে জঙ্গলের রাস্তা ধরে ফিরেছি।’’ চার দিন ধরে হেঁটেছেন তাঁরা। জঙ্গলেই ঘুমিয়েছেন।

শমশেরগঞ্জের নবাব কী করে এলেন এতটা রাস্তা? বছর সাঁইত্রিশের নবাবের বক্তব্য, ‘‘অনেক দিন ধরেই বিহারে রয়েছি। এই এলাকার কোন জায়গায় ভাষার কথ্য টান কেমন, তা জানি। যেখানেই পুলিশ জিজ্ঞাসা করেছে, সেখানকার লোকের কথা বলার ধরনেই বলেছি, পাশের গ্রামে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছি। সবাই বিশ্বাস করে ছেড়ে দিয়েছে।’’ সারা রাস্তায় কোথাও দোকান খোলা পাননি। রাতেও সাইকেল চালিয়েছেন।

Advertisement

প্রাথমিক স্তরের পরে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি নবাবের। ১২ বছর আগে পটনা গিয়েছিলেন। সাইকেলে শহরের অলিগলি ঘুরে বাসন ফেরি করেন। তাই বাড়িতে না জানিয়ে সাইকেলে চেপেই বেরিয়ে পড়েছিলেন। নবাবের স্ত্রী শেলি বিবি বলেন, ‘‘আমারা জানতাম না। কিন্তু ও আসার পরে নিশ্চিন্ত হয়েছি, এটাও সত্যি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন