প্রতীকী ছবি
থানকুনি পাতা বেঁটে খেলে নাকি করোনা হয় না? ফোনে এই প্রশ্ন শুনে খানিকক্ষণ চুপ ছিলেন হেল্পলাইনের কর্মী। তারপরে ‘জানি না’ বলতেই ফোনের ওপার থেকে মহিলাকণ্ঠে মুখ ঝামটা উড়ে এসেছে, ‘জানেন না তো কন্ট্রোল রুম খুলে নম্বর বিলিয়েছেন কেন?’
করোনা আতঙ্কের আবহে একাধিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে জলপাইগুড়িতে। জেলা প্রশাসনের ২৪ ঘণ্টার কন্ট্রোল রুম চলছে। স্বাস্থ্য দফতর, জলপাইগুড়ি পুরসভা আলাদা কন্ট্রোল রুম খুলেছে। জেলা পুলিশের আলাদা কন্ট্রোল রুম খোলার পাশাপাশি, প্রতিটি থানা এলাকায় একটি করে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রতিটি কন্ট্রোল রুমে দিনে গড়ে ৫০-৬০টি ফোন আসছে। কর্মীদের দাবি, বেশিরভাগ ফোনেই আসছে অদ্ভুতুড়ে সব প্রশ্ন।
জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কন্ট্রোল রুমে গত সপ্তাহে এসেছিল এমনিই একটি প্রশ্ন। কর্মী ফোন তুলতেই ওপার থেকে বয়স্ক পুরুষকন্ঠে প্রশ্ন, “আচ্ছা, আমি তো ব্যাঙ্কে যেতে পারছি না ইএমআই দিতে কী হবে বলতে পারেন?”
প্রশ্নের অর্থ বুঝতে পারেননি কর্মী। তখন আবার প্রশ্ন করা হয়, “ইএমআই দিতে ব্যাঙ্কে আসা-যাওয়ার পথে আমি কি কোনওভাবে করোনায় সংক্রমিত হতে পারি।” উত্তর খুঁজে না পেয়ে কন্ট্রোল রুমের কর্মী পরামর্শ দিয়েছিলেন, ‘‘ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিকে বাড়িতে ডেকে নিন।’’
প্রশ্ন এসেছে, ‘কত বার হাঁচি হলে বোঝা যাবে করোনার উপসর্গ দেখা দিয়েছে?’ এই প্রশ্নেরও উত্তর খুঁজে পাননি কর্মী। জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের ওসি রত্না চক্রবর্তীর কথায়, “কাজের ফোনও অনেক আসছে। তবে প্রতিদিনই এমন অনেক প্রশ্ন আসছে যেগুলির উত্তর দিতে সমস্যা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য দফতরের একটি কন্ট্রোল রুমে ফোন করে একজন জানতে চেয়েছেন, করোনার ভয়ে সকলে তো মুরগির মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তাঁর বাড়ির পোষা কুকুরকে নিয়মিত মুরগির স্টু খাওয়ানো হয়, তা হলে কি তাঁর পোষ্যের করোনা হতে পারে। এই প্রশ্নের সঙ্গে লেজুড় ছিল, “মুরগি বাতিল তালিকায় হলে আমাদের কুকুরকে কী খাওয়ানো যেতে পারে?”
বিড়ম্বনায় পড়েছে জলপাইগুড়ি পুরসভাও। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে থাকা চেয়ারম্যান পরিষদ (স্বাস্থ্য) সৈকত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কারও কোনও অসুখ করলেই কন্ট্রোল রুমে ফোন করে নালিশ করছেন। পড়শির রোগ হলে সেটাও অনেকে ফোন করে জানাচ্ছেন।” জ্বর হলে কোন ওষুধ খেতে হবে এমন প্রশ্ন করেও অনেকে ফোন করছেন কন্ট্রোল রুমে।