লটারি নীতিতে আমূল বদল আনছে রাজ্য সরকার। সব ঠিকঠাক থাকলে জানুয়ারিতেই প্রতিদিন রাজ্যের নিজস্ব লটারি চালু হচ্ছে। এখন বছরে ৪৮টি সাপ্তাহিক এবং ছ’টি এক কোটি টাকা পুরস্কারের বাম্পার লটারির খেলা হয়। সেই ব্যবস্থা বদলে রোজ রাজ্য লটারির খেলা হবে। এ সংক্রান্ত সরকারি বিজ্ঞপ্তিও অর্থ দফতর জারি করেছে।
শুধু খেলা চালুই নয়, টিকিট বিক্রির বেশির ভাগ টাকাই পুরস্কার হিসেবে দেবে রাজ্য। নগদ পুরস্কারও দ্রুত তুলে দেওয়া হবে বিজেতার হাতে। এত দিন রাজ্য লটারির পুরস্কার মূল্য পেতে কালঘাম ছুটে যেত।
নবান্নের খবর, এ রাজ্যে রোজ ৮ থেকে ১০ কোটি লটারি টিকিট বিক্রি হয়। তার মাত্র ১% এখন ‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লটারির’ দখলে। তাতেই গত আর্থিক বছরে ২৮ কোটি টাকা লাভ হয়েছে। এ রাজ্য থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণের কিছু রাজ্য। সেই বাজার ধরতেই মরিয়া রাজ্য।
আরও পড়ুন: ডিমের দাম বাড়তে বাড়তে ৭ টাকায় ঠেকেছে! কেন?
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘জিএসটি-পরবর্তী সময়ে রাজ্যকে নিজের আয় আরও বাড়াতে হবে। লটারি যখন চলছেই, তখন সেখান থেকেও আয় বাড়ানো হবে না কেন?’’
এখন রাজ্য লটারির খেলা হয় সাপ্তাহিক। এ ছাড়া, ১ জানুয়ারি, রথযাত্রা, দোল, পয়লা বৈশাখ, দীপাবলি এবং পুজোতে এক কোটির বাম্পার চালু আছে। এখন রাজ্য লটারির যে পরিমাণ টিকিট বিক্রি হয় তার ৩৫% টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।
কর্তারা জানাচ্ছেন, বাম্পার হোক বা সাপ্তাহিক, রাজ্য লটারির পুরস্কার জিতলে টাকা পেতে কয়েক বছর পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হয়। অথচ ভিন্ রাজ্যের লটারিতে সাত-দশ দিনের মধ্যে পুরস্কার দিয়ে দেওয়া হয়। তাদের মোট পুরস্কার মূল্যও বেশি। রোজের লটারি চালু হলে টিকিট বিক্রির ৬৫% টাকা পুরস্কার হিসেেব দেওয়া হবে। এবং তা দ্রুত মেটানো হবে। ফলে এ রাজ্যের লটারির বাজারের বড় অংশেরই দখল নেওয়া যাবে বলে কর্তারা আশাবাদী। এক কর্তার কথায়, ‘‘কেরলে লটারি থেকে বছরে গড়ে ৫০০০ কোটি টাকা আয় হয়। রোজ খেলা চালু হলে আমাদের আয় কয়েকশো কোটি তো হবেই।’’
তবে রোজের লটারি চালু হলে তার সামাজিক কুপ্রভাবও রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। এক সময়ে বাম সরকার সুপার লোটোর অনুমতি দিয়েছিল। যার জেরে বহু আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লোটো বন্ধের দাবিতে বাংলা বন্ধ পর্যন্ত ডেকেছিলেন। ওই লটারি অবশ্য দিনে তিন-চার বার পর্যন্ত খেলা হতো। তখনও রাজ্য লটারি নীতি বদলায়নি। নবান্ন বলছে, এখন সময় বদলেছে।