অ্যাপোলো কি দোষী, দু’ভাগ কাউন্সিল

কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালকে ঘিরে এ বার কার্যত ভাগ হয়ে গেল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার কাউন্সিলে এ ব্যাপারে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার আলোচনায় দুই যুযুধান গোষ্ঠীর মতভেদ স্পষ্ট হয়ে যায়। কোনও বেসরকারি হাসপাতালকে ঘিরে এমন মতপার্থক্য ‘নজিরবিহীন’ বলে মানছে স্বাস্থ্য দফতরও।

Advertisement

সোমা মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০৪:১৩
Share:

এক পক্ষ মনে করছেন, দোষী। তাই উপযুক্ত শাস্তি প্রয়োজন। অন্য পক্ষের বক্তব্য, সমস্যা থাকলেও এ যাত্রায় সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়াই ভাল। কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালকে ঘিরে এ বার কার্যত ভাগ হয়ে গেল রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল। বৃহস্পতিবার কাউন্সিলে এ ব্যাপারে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার আলোচনায় দুই যুযুধান গোষ্ঠীর মতভেদ স্পষ্ট হয়ে যায়। কোনও বেসরকারি হাসপাতালকে ঘিরে এমন মতপার্থক্য ‘নজিরবিহীন’ বলে মানছে স্বাস্থ্য দফতরও।

Advertisement

১৩ মাস আগে ডানকুনির বাসিন্দা সঞ্জয় রায়ের মৃত্যুকে ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। টাউন হলে বেসরকারি হাসপাতালগুলির কর্তাদের ডেকে বৈঠক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তড়িঘড়ি গঠিত হয়েছিল স্বাস্থ্য কমিশনও। ওই ঘটনায় মেডিক্যাল কাউন্সিলে অ্যাপোলোর কয়েকজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি এবং অন্যায়ভাবে বিল বাড়ানোর অভিযোগ জমা পড়েছিল। এ সংক্রান্ত মামলায় গত ডিসেম্বরে চার্জশিট পেশ হয়। সেখানে একাধিক ক্ষেত্রে অ্যাপোলোর ত্রুটি প্রমাণ হয় বলে স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি। যদিও অ্যাপোলো কর্তারা সে কথা অস্বীকার করে সপক্ষে কিছু প্রমাণ কাউন্সিলে পেশ করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতেই বৃহস্পতিবার বাদী-বিবাদী দু’পক্ষকে ডাকা হয় কাউন্সিলে। অভিযুক্ত এক চিকিৎসক আলোচনা চলাকালীন কেঁদে ফেলেন বলেও কাউন্সিল সূত্রে খবর।

আলোচনা চলাকালীনই স্পষ্ট হয়ে যায় কাউন্সিলের নেতাদের বিভাজন। কাউন্সিলের এক প্রবীণ সদস্য বলেন, ‘‘যাঁরা অ্যাপোলোর চিকিৎসকদের কড়া শাস্তির পক্ষে, তাঁদের মধ্যে ছিলেন কাউন্সিল সভাপতি নির্মল মাজি। আর যাঁরা অভিযুক্ত চিকিৎসকদের সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে সরব হন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম চিকিৎসক শান্তনু সেন।’’ দুজনের কেউই অবশ্য বিষয়টি সরাসরি স্বীকার করেননি।

Advertisement

নির্মলবাবু শুক্রবার বলেন, ‘‘কোনও একটি বিষয়ে এত দীর্ঘ সময় আলোচনার নজির কাউন্সিলের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। দ্রুত এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এর চেয়ে বেশি কিছু বলব না।’’ আর রাজ্যসভায় তৃণমূলপ্রার্থী শান্তনুবাবুর বক্তব্য, ‘‘বিরোধিতা নয়, মতপার্থক্য। গণতন্ত্রে থাকতেই পারে। ম্যারাথন মিটিংয়ে অনেক কিছুই হয়েছে।’’

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় সঞ্জবাবুকে অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর এক সপ্তাহ পরে তাঁকে এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করেন পরিবারের লোকেরা। সেখানেই মৃত্যু হয় সঞ্জয়ের। অ্যাপোলোর বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতি এবং অস্বাভাবিক বিল আদায়ের চেষ্টার অভিযোগের তদন্তে নামে পুলিশও। পুলিশসূত্রে খবর, লিভারের রক্তপাত বন্ধ করতে অ্যাঞ্জিও এম্বোলাইজেশন করা হয়েছে বলে বিল করা হলেও ওই প্রক্রিয়ার প্রমাণ মেলেনি। এ ব্যাপারে হাসপাতাল যে সিডি-টি জমা দিয়েছিল, সেটিও যথাযথ নয় বলে পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি। পুলিশের পাশাপাশি, কাউন্সিলের গঠিত তদন্ত কমিটিতেও একই সংশয়ের কথা উঠে আসে। তবে হাসপাতালের তরফে বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।

এই মুহূর্তে কাউন্সিলে বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের মুখে দাঁড়িয়ে। তার আগে সদস্যদের এই মতবিরোধ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘যে ঘটনায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী অত তৎপরতা দেখিয়েছিলেন, সেই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগলে তা দুর্ভাগ্যজনক।’’ এ নিয়ে মন্তব্য করেননি কাউন্সিলের তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান রাজেন্দ্রনাথ পাণ্ডে। আর অ্যাপোলোর সিইও রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘এখনও বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়নি। এই পরিস্থিতিতে আন্দাজে কিছু বলতে চাই না।’’

(সহ-প্রতিবেদন: শিবাজী দে সরকার)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন