অভিনব: মাছের আঁশ থেকে শিল্প। নিজস্ব চিত্র
শিল্পের কৌলীন্যে উত্তরণ ঘটছে মাছের আঁশের। আঁস্তাকুড় থেকে তার ঠাঁই হচ্ছে বৈঠকখানায়। ফেলে দেওয়া মাছের আঁশ এখন হস্তশিল্পের উপকরণ। এই ‘বর্জ্য’ কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের হস্তশিল্প তৈরির প্রশিক্ষণ দিচ্ছে মৎস্য দফতর।
সার বা মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করার পাশাপাশি মাছের আঁশকে যে শিল্পের কাজেও লাগানো যায়, তা প্রমাণ করেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির বাসিন্দা আমিরুল মল্লিক। বছর আটেক আগে নিজের গ্রামে মাছের আঁশ দিয়ে ময়ূর, রাধাকৃষ্ণ-সহ নানা দেবদেবীর মূর্তি তৈরি শুরু করেন তিনি। মুনশিয়ানার স্বীকৃতিও জুটেছে কমবেশি। রাজ্যের বিভিন্ন হস্তশিল্প মেলায় বহু পুরস্কার পেয়েছেন। ২০১৬ সালে বর্ধমানে মাটি উৎসবে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের হাতে স্মারক হিসেবে তুলে দেওয়া হয় আমিরুলের তৈরি রাধাকৃষ্ণের মূর্তি। এর পরে আমিরুলের হাত ধরে বিভিন্ন জেলায় এই হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে মৎস্য দফতর। চন্দ্রনাথবাবু জানান, প্রথমে তিনটি জেলায় এই কাজ শুরু হল। ভবিষ্যতে সব জেলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
মৎস্য দফতর আমিরুলকে দিয়ে গত বছর জানুয়ারিতে হুগলির ধনিয়াখালিতে স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে হস্তশিল্পের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। ওখানে ২৫ জনকে প্রশিক্ষিত করা হয়। পেশায় মাছ বিক্রেতা, হুগলির ধনিয়াখালির বাসিন্দা শক্তি পাত্র ধনিয়াখালি ব্লকে প্রশিক্ষণ নিয়ে হস্তশিল্পের কাজ শুরু করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শুধু মাছ বিক্রি করে সংসার চালানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছিল। এখন শিল্পসামগ্রী গড়ে ভাল আয় হচ্ছে।’’
প্রশিক্ষিতদের দিয়ে আবার জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। হুগলি, মুর্শিদাবাদ ও হাওড়ায় মৎস্যজীবীরা এবং তাঁদের পরিবারের লোকজন এই প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, নিচ্ছেন। ‘‘মাছের আঁশ সার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। যত্রতত্র আঁশ ফেললে দূষণ ছড়ায়। সেই আঁশকে কাজে লাগানোর চেষ্টা প্রশংসনীয়,’’ বলেন মৎস্যবিজ্ঞানী অমলেশ চৌধুরী।