রোজ এমন ছবি দেখা যায় কাটোয়া রেলগেটে। ছবি:অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
রেল যোগাযোগে গুরুত্ব বাড়ছে কাটোয়ার। নতুন ব্রডগেজ লাইন হয়েছে, চলছে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত ডবল লাইনের কাজ। প্রস্তুতি নিচ্ছে কাটোয়া স্টেশনও। নতুন প্ল্যাটফর্ম হয়েছে। যোগাযোগ, যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করতে ঘুরে গিয়েছেন কর্তারা। কিন্তু সব কাজই থমকে যায় শহরে ঢোকার রেলগেটে।
পরীক্ষার্থী হোক বা অ্যাম্বুল্যান্স চেপে মরণাপন্ন রোগী— ব্যস্ততার সময়ে কখনও দশ, কখনও পনেরো মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে থাকাই দস্তুর এখানে। কাটোয়াবাসীর অভিযোগ, স্টেশনের গুরুত্ব বাড়লে কী হবে, বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরে ঢুকে স্টেশন পৌঁছতে রেলগেটের যানজটেই কেটে যাচ্ছে দিন-রাত। বারবার উড়ালপুলের দাবি জানানো হয়েছে, জট কাটাতে বিকল্প রাস্তা হয়েছে কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি।
১৯৯৬ সালে রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রামবিলাস পাসোয়ান কাটোয়ায় এলে তখনকার সদ্য নির্বাচিত বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় রেলগেটে উড়ালপুল তৈরির দাবি তোলেন। এর দশ বছর পরে তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব বর্ধমান-কাটোয়া ব্রডগেজের শিলান্যাস করতে এলে তাঁর কাছেও একই দাবি জানান বাসিন্দারা। বছর চারেক আগেও কাটোয়া-আজিমগঞ্জ লাইনের বৈদ্যুতিকরণের অনুষ্ঠানে তৎকালীন রেলের প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর কাছে উড়ালপুলের দাবি জানান বাসিন্দারা। পুরসভা থেকে একাধিক বার রেল দফতর, প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও চিঠি চালাচালি হয়। কিন্তু শুকনো প্রতিশ্রুতি ছাড়া আখেরে লাভ হয়নি।
প্রতি দিন ৭০-৭২টি ট্রেন চলাচল করে কাটোয়া স্টেশন দিয়ে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত শতাধিক বার গেট ওঠানো-নামানো হয়। বাসিন্দারা জানান, সকালের দিকে রেলগেট পড়লেই বাসস্ট্যান্ড মোড় থেকে উত্তরা সিনেমা হল পর্যন্ত সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সাইকেল, ভ্যান, মোটরবাইক। সুনীতা দাস, পরীক্ষিত পালেরা বলেন, ‘‘ছোটখাট দুর্ঘটনা তো লেগেই থাকে। কখনও রিকশার ধাক্কায় সাইকেল থেকে পড়ে যান আরোহী, কখনও সার দিয়ে দাঁড়ানো বাইকের পিছনে গাড়ির ধাক্কা লাগলেই শুরু হয় বচসা।’’ আবার দেরি এড়াতে রেলগেট পড়তে দেখলেই গাড়ির গতি বাড়িয়ে তা পেরনোর চেষ্টা করেন অনেকে। তাতেও গাড়ির সঙ্গে রেলগেটের ধাক্কায় ওভারহেড তার ছিঁড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটে। দীর্ঘ সময় ট্রেন বন্ধ থাকে, দেরিতে ট্রেন চলে, ভোগান্তি বাড়ে আরও।
যানজটের মধ্যেই রেলগেট লাগোয়া মন্দিরের পাশে টোল ট্যাক্স আদায়ের জন্য দুর্ভোগ আরও বাড়ে বলেও দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। জয়দেব দত্ত, ননীগোপাল দাসদের কথায়, ‘‘যাত্রী বা পণ্যবাহী গাড়ি দেখলেই কর আদায়ের জন্য রসিদ হাতে কর্মীরা ছুটে আসেন। অনেক সময় কথা কাটাকাটিও বাধে। যানজট সরতে আরও সময় লেগে যায়।’’ পুরসভার কাছে অন্যত্র টোল ট্যাক্স আদায়ের ব্যবস্থা করারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু জানান, উড়ালপুলের প্রস্তাবে রেল রাজি থাকলেও বিভিন্ন সময়ে বাম সরকারের টালবাহানায় কাজ হয়নি। বছর দেড়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানালে উনি রাজি হয়ে যান। রাজ্যের রেল প্রতিমন্ত্রী রাজেন গোহেন রাজ্য-রেল যৌথ উদ্যোগে উড়ালপুল তৈরির অনুমোদন নিশ্চিত করে চিঠি পাঠান বিধায়ককে। রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় কমবাইন্ড জিএডি (জেনারেল অ্যারেঞ্জমেন্ট ড্রয়িং) প্রস্তুতকরণের কাজ চলছে বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয় বলে বিধায়কের দাবি। তবে উদ্যোগ থেমে গিয়েছে সেখানেই। বিধায়ক বলেন, ‘‘কয়েকবার রেলের আধিকারিকেরা পরিদর্শন করে গিয়েছেন। কাজ কতদূর এগোল তা খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
জানা যায়, বছর আটেক আগে মাপঝোক করে উড়ালপুল তৈরির খরচ বাবদ ৯ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠায় পুরসভা। যদিও উড়ালপুলের বিষয়ে এখনও কোন নির্দেশিকা আসেনি বলেই জানান স্টেশন ম্যানেজার দিলীপ মণ্ডল।
(চলবে)