রাগসঙ্গীত বাঁচাতে আইআইটি-র প্রযুক্তি

বৃহস্পতিবার  অজয়বাবু খড়্গপুর আইআইটিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই নানা কথায় উঠে আসে আইআইটি-র এই ভাবনা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫১
Share:

রাগসঙ্গীত চর্চায় সঙ্গী হবে প্রযুক্তি!

Advertisement

শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিক্ষার পুরনো পদ্ধতিকে প্রযুক্তির মাধ্যমে কী ভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টায় এ বার উদ্যোগী হল খড়্গপুর আইআইটি। ভারতীয় রাগসঙ্গীত শিক্ষার যে পদ্ধতি এত দিন ধরে চলে এসেছে, তা সংরক্ষণই মূল উদ্দেশ্য। এই কাজে আইআইটি-র শরিক হবেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পী তথা গবেষক অজয় চক্রবর্তী।

বৃহস্পতিবার অজয়বাবু খড়্গপুর আইআইটিতে গিয়েছিলেন। সেখানেই নানা কথায় উঠে আসে আইআইটি-র এই ভাবনা। আইআইটি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিজ্ঞান ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে তৈরি ‘সন্ধি’ প্রকল্পে গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছে প্রযুক্তিবিদ্যার বিশ্বখ্যাত এই প্রতিষ্ঠান। এ বার একেবারে অজয় চক্রবর্তীর স্কুলের গুরু-শিষ্য পরম্পরায় যে ভাবে শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শেখানো হয়, সেই পদ্ধতি সংরক্ষণের কাজে নেমেছে তারা।

Advertisement

‘পুরিয়া’, ‘মারোয়া’, ‘সোহিনী’। শব্দগুলি ভারতীয় রাগসঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। এগুলি এক-একটি রাগ। তিনটি রাগেই স্বরের ব্যবধান অনেক কম। শুধু কোথায় ‘সা’ লাগছে, তাতেই পার্থক্য স্পষ্ট হয়। তা প্রযুক্তির মাধ্যমে কী ভাবে শেখা হবে, তার পথও খুঁজে বার করবেন আইআইটি-র প্রযুক্তিবিদেরা।

গত জানুয়ারি থেকে অডিও-ভিস্যুয়াল ও লিখিত ভাবে নথি সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে। খড়্গপুর আইআইটি-র অধিকর্তা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী বলেন, “প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় রাগসঙ্গীতের সংরক্ষণ করব আমরা। আমাদের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ব্যাকরণ বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেই এই চেষ্টা। এই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন অজয় চক্রবর্তী।’’ এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়ে অজয়বাবুর বক্তব্য, “আমার গুরু বলেছিলেন, গান গাওয়ার সঙ্গে তোমাকে গান বাঁচাতেও হবে। বিগত কুড়ি বছর ধরে বিজ্ঞান নির্ভর সঙ্গীত শিক্ষা দান করে চলেছি। কিন্তু এগুলির সংরক্ষণ না হলে এক সময়ে হারিয়ে যাবে। আইআইটি এ ভাবে এগিয়ে আসবে, ভাবিনি।”

গুরু-শিষ্য পরম্পরাতেই বেঁচে রয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরনো ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত। মূলত মৌখিক শিক্ষাদানের মাধ্যমেই এগোচ্ছে এই গানের ধারা। তবে প্রযুক্তির এই যুগে কত দিন গুরু-শিষ্য পরম্পরা বেঁচে থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অজয়বাবুর মতে, ‘‘আগামী প্রজন্মের জন্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চায় নবজাগরণ প্রয়োজন। অনেক ছেলে-মেয়ের প্রতিভা রয়েছে, কিন্তু ঠিক পদ্ধতিতে শিক্ষার অভাবে তাঁরা সুযোগ পাচ্ছেন না। এক সময়ে হয়তো বুঝতে পারব, কী হারিয়েছি। তখন দেরি হয়ে যাবে।”

সেই প্রয়োজনটা বুঝেই এ কাজে উদ্যোগী হয়েছে আইআইটি। আপাতত কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক তথা শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী পল্লব দাশগুপ্তকে প্রকল্পের আহ্বায়ক করা হয়েছে। এ ছাড়াও আছেন কলা বিভাগের অধ্যাপক, আর এক সঙ্গীতজ্ঞ প্রিয়দর্শী পট্টনায়েক। তাঁরা আইআইটি-র বিভিন্ন
বিভাগের বাছাই করা পড়ুয়াদের এই প্রকল্পে যুক্ত করে গবেষণার মাধ্যমে রাগসঙ্গীতের যাবতীয় শিক্ষণ পদ্ধতি সংগ্রহ করবেন। এই কাজে তাঁদের সাহায্য করবেন অজয়বাবু। পল্লববাবু বলেন, “প্রথম পর্যায়ের কাজ আগামী এক বছরে শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি। এমন ভাবে এগুলি সংরক্ষণ করা হচ্ছে, যাতে সহজেই কৌশল রপ্ত করা যায়। যিনি সঙ্গীত শিক্ষক, তিনিই এই কৌশল রপ্ত করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তা ছড়িয়ে দিতে পারবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন