বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে দেশিকোত্তম উপাধি প্রদান এ বার স্থগিত থাকায় তিনি ‘অখুশি’ বলে মন্তব্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পাঠানো তালিকায় কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন না দেওয়ায় দেশিকোত্তম এ বার দেওয়া হচ্ছে না। বিশ্বভারতীয় আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার ১৮ ঘণ্টা আগে মুখ্যমন্ত্রী ওই বিষয়ে মুখ খোলায় দেশিকোত্তম-বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ হল।
পাঁচ বছর পরে আজ, শুক্রবার বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জে ফের সমাবর্তন উৎসব হচ্ছে। সেখানে দেশিকোত্তমই শুধু নয়, গগন-অবন এবং রথীন্দ্র পুরস্কারও দেওয়া হচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে সমাবর্তনে এ বার প্রথা ভাঙা হচ্ছে বলে বিতর্ক শুরু হয়েছে কিছু মহলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সবুজকলি সেন অবশ্য বৃহস্পতিবার বিতর্ক বন্ধ করতে চেয়ে জানিয়েছেন, সমাবর্তনে শঙ্খধ্বনি থেকে শুরু করে বেদগান, সঙ্কল্প বচন থেকে দীক্ষান্তের ভাষণ— সবই প্রথা মেনে হবে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সময়াভাবে পাঁচ বছর ধরে জমে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর তালিকার প্রত্যেককে ছাতিম পাতা তুলে দেওয়া সম্ভব হবে না। আচার্যের হাত থেকে প্রতীকী অনুষ্ঠানে ‘সপ্তপর্ণী’ নেবেন উপাচার্য এবং তিনিই পরে তা ছাত্রছাত্রীদের হাতে তুলে দেবেন।
সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের নাম না করলেও এ দিন বোলপুরে পৌঁছে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘বিশ্বভারতী বাংলার গর্ব। তাদের সমাবর্তনে এসে আমি খুশি। কিন্তু আমি অখুশি যে, এ বার দেশিকোত্তম দেওয়া হচ্ছে না। অমিতাভ বচ্চন, যোগেন চৌধুরী-সহ সাত জনের নাম ছিল তালিকায়। তাঁরা প্রত্যেকেই ওই সম্মানের যোগ্য। প্রথা মেনে দেশিকোত্তম দেওয়া হলে এই সমাবর্তনের গুরুত্ব আরও বাড়়ত।’’ তবে এই বিষয়ে তিনি কেন্দ্রের সঙ্গে কথা বলতে চান কি না, তা স্পষ্ট করেননি মুখ্যমন্ত্রী।
উপাচার্য অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, এর আগে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা বা তুরস্কের প্রধানমন্ত্রীকে বিশেষ সমাবর্তনে দেশিকোত্তম দেওয়া হয়েছে। সমাবর্তনেই দেশিকোত্তম প্রতি বার দেওয়া হয়েছে, এমন নয়। কিন্তু এ বার যে জটিলতায় দেশিকোত্তম দেওয়া হচ্ছে না, তার পরে কি তাঁরা নতুন তালিকা পাঠাবেন? নাকি সম্মান প্রদান শুধু স্থগিত থাকছে? আনন্দবাজারের প্রশ্নের জবাবে সবুজকলিদেবী বলেছেন, ‘‘এখন আর কোনও তালিকা পাঠানো হচ্ছে না। পরে কী হবে, এখন মন্তব্য করতে চাই না।’’
এই বিতর্কের মাঝেই অন্য একটি প্রথা ভাঙার ঘটনা ঘটছে আজ। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে প্রায় চার দশক কোনও মুখ্যমন্ত্রী আসেননি। ইন্দিরা গাঁধী যখন আচার্য, তখন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় এসে দর্শকাসনে বসতেন। প্রায় ৪২ বছর পরে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতা শুধু সমাবর্তনে থাকছেনই না, মঞ্চে আচার্য প্রধানমন্ত্রী, অতিথি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান (রেক্টর) রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে মঞ্চে তাঁর আসনও থাকছে। মমতা অবশ্য বলছেন, ‘‘এ বাবা! তা-ই নাকি? আমি অবশ্য এটা জেনে আসিনি। আগেও তো রাজীব গাঁধীর আমলে কোর্ট সদস্য হিসেবে সমাবর্তনে এসেছি।’’
মুখ্যমন্ত্রীর জন্য মঞ্চে আসন রেখে প্রথা ভাঙাই বা কেন? উপাচার্যের বক্তব্য, ‘‘এটা একটা সম্মান প্রদর্শন। কোনও অনুরোধ বা অন্য কোনও কারণ নেই!’’