ভোটের ডিউটি করতে গিয়ে উত্তর দিনাজপুরের একটি মাদ্রাসার শিক্ষক রাজকুমার রায়ের মৃত্যু নিয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ রাজ্যের শিক্ষকেরা। নানা জায়গায় চলছে এই ঘটনার বিরুদ্ধে শিক্ষকদের প্রতিবাদ সভা। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে যাচ্ছে শিক্ষকদের ক্ষোভ। কেন রাজকুমারবাবুকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রশাসন দিতে পারল না, তা নিয়ে চূড়ান্ত ক্ষোভ শিক্ষকদের।
এ দিন বারাসতের কাছারি ময়দানে অরাজনৈতিক ভাবে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিলেন শিক্ষকেরা। অন্যতম উদ্যোক্তা উত্তর ২৪ পরগনার বরবরিয়া জুনিয়র হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রবাল সমাদ্দার জানালেন, এমন ঘটনার পরে শিক্ষকেরা একটি অরাজনৈতিক ফোরাম তৈরি করতে চলেছেন। তাঁদের দাবি ভোটে শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতেই হবে।
ইতিমধ্যে রাজকুমারবাবুর মৃত্যু নিয়ে রাজ্যপালকে চিঠি দিয়েছে রাজ্যের কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম নেতৃত্বাধীন শিক্ষক সংগঠন ওয়েবকুটা। ঘটনার সিবিআই তদন্তের পাশাপাশি ওয়েবকুটার দাবি— প্রতিটি ভোট কর্মীকে ভবিষ্যতে যথাযথ নিরাপত্তা দিতে হবে। স্কুল, কলেজের শিক্ষকদের ভোটের কাজ না-দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছে ওয়েবকুটা। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শ্রুতিনাথ প্রহরাজ জানালেন, এতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির পঠনপাঠনও বিঘ্নিত হয়।
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহকারী সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনায় শিক্ষক সমাজের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়েছে। ভোটের কাজ শিক্ষকদের দিলে তাঁদের ১০০% নিরাপত্তা দিতে হবে। না হলে আগামী দিনে শিক্ষকেরা এই কাজ করতে চাইবেন না।’’ স্বপনবাবু জানান, ভোটের কাজ করতে গেলে শিক্ষকতার কাজ বিঘ্নিত হয়। এ বার ভোটের আগেই মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার খাতা দেখার কাজ ছিল। সেই সময়ে ভোটের কাজের প্রশিক্ষণও ছিল। তিনি বলেন, ‘‘খাতা দেখার কাজ এ বার খুবই বিঘ্নিত হয়েছে। মূল্যায়নে সুবিচার করা যায়নি। এর পর রাজকুমারবাবুর ক্ষেত্রে যা হয়েছে তার পরে শিক্ষকেরা আর ভোটের কাজ করতে চাইবেন না।’’ নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতির (এবিটিএ) সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ভোটের ডিউটির নামে মানুষের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা বন্ধ হোক। এই ঘটনায় সমস্ত মানুষ প্রতিবাদ করুন।’’ পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নেতা নবকুমার কর্মকার বলেন, ‘‘সরকার শিক্ষকদের নিরাপত্তা দিতে না-পারলে ভোটের ডিউটিতে যাওয়ার আগে শিক্ষকদেরও ভাবতে হবে।’’