মহড়া: নাটকের মঞ্চে স্কুলপড়ুয়ারাও। —নিজস্ব চিত্র
মাধ্যমিক পরীক্ষায় জেলায় প্রথম হয়েছে অর্পিতা। ভাগচাষি ঘরের ওই মেয়েকে সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছেন অনেকে। পড়াশোনার খরচ দিতেও রাজি তাঁরা। কিন্তু তার থেকেও বড় হাতছানি গ্রাস করেছে মেয়েটির পরিবারকে। মেয়েকে ধনী পরিবারের গৃহবধূ করার লোভ সামলাতে পারেননি বাবা। নাবালিকাকে জোর করে বিয়ের পিঁড়িতে বসাতে যাচ্ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সক্রিয়তায় রক্ষা পায় অর্পিতা।
এই অর্পিতা হাওড়ার হাটবাউড়িয়া শীতলাতলার উজান গোষ্ঠী আয়োজিত একটি নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র মাত্র। বাস্তব চরিত্র না-হয়েও অর্পিতা কিন্তু বাস্তবাধিক বাস্তব। গোটা রাজ্যে এমন বহু অর্পিতাই যে গ্রামীণ রীতিরেওয়াজ, ক্ষেত্রবিশেষে অভিভাবকদের লোভের এবং দায় ছেড়ে ফেলার মানসিকতার শিকার হচ্ছে, সেটা মেনে নিচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারাও। তাই কন্যাশ্রীর মতো বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে এই প্রবণতা প্রতিহত করার চেষ্টা করছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি এই সামাজিক রীতি রুখতে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় স্কুলপড়ুয়াদের দায়িত্ব দিয়েছে জেলা প্রশাসন। বাল্যবিবাহের মানসিকতা থেকে মুক্তির জন্য যে সামাজিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা দরকার, সেটা মানছে সব শিবিরই। তাই নাটকের মাধ্যমেও চলছে প্রচার। রবিবার যেমন হল উজান গোষ্ঠীর নাটক।
উজানের তরফে শুভজিৎ কর ও বাপ্পা দত্ত জানান, তাঁদের গোষ্ঠীর সদস্য সুভাষ দেবনাথের ভাবনা থেকেই এই নাটকের জন্ম। ইদানীং প্রায়ই নাবালিকা বিয়ের খবর আসছে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এই প্রবণতা দূর করতে নববর্ষের দিনটিকেই বেছে নিয়েছেন তাঁরা। ‘‘এলাকার বিভিন্ন পরিবারের লোকজনই এই নাটকে অভিনয় করছেন। এতে সচেতনতা বাড়বে এবং আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে,’’ বলেন বাপ্পাবাবু। স্থানীয় বাসিন্দা রাধা দাসের কথায়, ‘‘এ ধরনের সচেতনতা খুবই প্রয়োজন। একযোগে অভিনয়ের সুবাদে এই কুপ্রথার অপকারিতা ভাল ভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম।’’
উজান প্রশংসনীয় কাজ করছে বলে মনে করেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। ‘‘বিশেষ করে এলাকার সাধারণ মানুষকে যুক্ত করাটা খুবই ভাল কাজ। সরকার তো সব সময়েই পাশে আছে। সেই সঙ্গে বাসিন্দারা যদি এ ভাবে এগিয়ে আসেন, সমাজ আরও সুরক্ষিত হবে,’’ বলেন শশীদেবী।
যাত্রা-নাটকে লোকশিক্ষার কথা বলতেন রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব। এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নববর্ষের দিনটিকে বেছে নেওয়ার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্য দেখছেন পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘বর্ষবরণের দিনে এটা শুভ প্রয়াস। উজানের মতো অন্যান্য এলাকার উদ্যোগীরাও এ ভাবে এগিয়ে এলে এই কুপ্রথা থেকে সমাজকে মুক্ত করা যাবে সহজেই।’’ উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নাটকের মাধ্যমে সচেতনতা গড়ে তোলার এমন প্রয়াস দেখা গিয়েছে আগেই।