সাগর-সৈকতে: রবিবার দিঘায় ঢল পর্যটকদের। নিজস্ব চিত্র
ক্যালেন্ডারে তিন চার দিনের টানা ছুটির হদিস নেই। সামনে নেই কোনও উৎসবও। কিন্তু সপ্তাহান্তের দিঘা, মন্দারমনিতে ঢল নেমেছে পর্যটকের। কারণ, একদিকে ভোটের ঝক্কির ইতি এবং সেই সঙ্গে স্কুলে গরমের ছুটি পড়ে যাওয়া। এই দুয়ের যুগলবন্দিতেই ফলে সৈকত শহর এখন জমজমাট। তবে ভিড়ের সুযোগে হোটেলগুলি বুকিং নিয়ে কোনও কোনও ঝামেলা করছে কি না বা পর্যটকেরা হোটেল নিয়ে কোনও সমস্যায় পড়ছেন কি না সে দিকে কড়া নজর রেখেছে দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন।
কাঁথি পাবলিক স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ঈষিকী প্রধান ও তার মাসির মেয়ে গুনজিতা দে চুটিয়ে মজা করছিল দিঘার সৈকতে। গরমের ছুটির শুরুতেই এমন উপহার পেয়ে বেজায় দুই খুদে। রোজকার পড়া থেকে দিন কয়েকের ছুটি। তাই কলকাতার মানিকতলার গুনজিতা ও কাঁথির ঈষিকী সপরিবার শনিবার থেকেই দিঘায়। ঈষিকীর মা অর্পিতা গিরি প্রধান বলেন, ‘‘আমি কাঁথি ধর্মদাসবাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। গরমের ছুটি পড়েছে আমার স্কুলে এবং মেয়ের স্কুলেও। কলকাতার মানিকতলা থেকে বোনের পরিবারও ছুটিতে আমাদের বাড়িতে এসেছে। তাই সবাই মিলে হুলোলড় করতে চলে এসেছি দিঘায়। তবে বাচ্চাদের জন্যই আরও আসা। খুব ভিড়ও হয়েছে দেখছি।’’
নদিয়ার সরকারি কর্মী শোভন দাসের কথায়, ‘‘গরম পড়লে দিঘায় আসি। এ বার তো গরম তেমন প্রচণ্ড ভাবে এখনও পড়েনি। কিন্তু ভোটের ঝামেলায় আটকে গিয়েছিলাম। ভোটপর্ব মিটতেই সবাই মিলে চলে এসেছি।’’
এখন সমুদ্র স্নানের ক্ষেত্রেও কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। ফলে সব সময়েই সৈকতে ভিড় পর্যটকদের। সেই সঙ্গে চলছে সমুদ্র স্নানের মজা লোটা। পর্যটক ‘লক্ষ্মীর’ এমন আগমনে খুশি হোটেল ব্যবসায়ী ও দোকানদার, রেস্তরাঁ মালিক সকলেই। ওল্ড দিঘার এক রেস্তরাঁ মালিকের কথায়, ‘‘ভোটের কদিন তেমন ভিড় ছিল না। তবে ভোট পর্ব যেতেই ভিড় বাড়তে থাকে।’’ তবে ভিড়ের সুযোগ নিয়ে কিছু হোটেল মালিক ঘর বুকিংয়ের ভাড়া বাড়িয়ে দেন বলে প্রায়ই অভিযোগ করেন পর্যটকেরা। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘায় এসে হোটেল মালিকদের সাবধানও করে দিয়েছিলেন এই বিষয়ে। সেই সাবধানবাণী কোথাও লঙ্ঘন করা হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নজরদারি শুরু করেছে দিঘা শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আরও সপ্তাহখানেক এই ভিড় থাকবে। হোটেলগুলির বুকিং তালিকা তেমনই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন প্রায় সব হোটেলই ভর্তি। এই সুযোগে হোটেল মালিকরা যাতে পর্যটকদের হয়রানি না করেন সে দিকে আমরা কড়া নজর রাখছি।’’
ভিড়ের জন্য দিঘায় বাড়ানো হয়েছে পুলিশি নিরাপত্তা। বিশেষ করে নুলিয়া, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও কোস্টাল পুলিশ সৈকতে নজরদারিতে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, “পর্যটকদের জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।’’