রসনা: এই বিলিতি পাখিকেও পাতে আনতে মরিয়া রাজ্য প্রাণিসম্পদ দফতর।
পাঁঠা, মুরগি, ইলিশ, চিংড়ি তো আছেই। চুপিসারে বাঙালির রান্নাঘরে নিঃশব্দেই বিপ্লব ঘটাচ্ছে ‘টার্কি’!
এত দিন বড়দিন বা ইংরেজি নববর্ষে সাহেবি পদের তালিকাতেই ঠাঁই ছিল বিলিতি এই পাখির। মাঝে-মধ্যে রসনা পাল্টে টার্কির লোভে পার্ক স্ট্রিটে পাড়ি দিত বাঙালি। কিন্তু সেই ধারায় বদল আসছে ধীরে ধীরে। রাজ্য প্রাণিসম্পদ দফতরের দাবি, ব্রয়লার মুরগি খেতে খেতে অরুচি ধরা জিভের স্বাদ ফেরাতে বছরভর নধর টার্কির মাংস কিনছেন অনেকে। তাই এ বার নববর্ষকে সামনে রেখে টার্কিকে জনপ্রিয় করতে উৎসবের পথে হাঁটছে তারা।
প্রাণিসম্পদ দফতর জানিয়েছে, আজ, রবিবার পয়লা বৈশাখের দিন থেকেই সল্টলেকে তাদের রেস্তরাঁয় টার্কি উৎসব শুরু হবে। শুধু সাহেবি রোস্ট নয়, টার্কি থাকছে কষা, কাবাব, ঝোলেও। চলবে দিন পনেরো। প্রাণিসম্পদ বিকাশ মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলছেন, ‘‘আমরা চাই কোয়েল, মুরগির পাশাপাশি বাঙালি আরও বেশি করে টার্কির মাংস খাক।’’ এ বার থেকে প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নিগমের ‘হরিণঘাটা মিট’-এর বিপণন কেন্দ্রগুলিতে ঢালাও মিলবে টার্কির কাঁচা মাংস। ইতিমধ্যেই ২ টন মাংস মোড়কজাত করে ফেলা হয়েছে। জনপ্রিয়তা বা়ড়াতে ৫০০ গ্রাম মাংসের দামে ৬৫০ গ্রাম মাংস মিলবে।
আহারে...
• বিজ্ঞানসম্মত নাম: মেলিয়াগ্রিস গ্যালোপাভো
• আদি নিবাস: মেক্সিকো
• ওজন: ৫-১১ কেজি
• গুণ: ক্যালোরি, কোলেস্টেরল কম, প্রোটিন বেশি।
রক্তচাপ, সুগার, কোলেস্টেরলে ঘায়েল বাঙালির স্বাস্থ্যরক্ষাতেও টার্কির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পুষ্টিবিদ রেশমী রায়চৌধুরী জানান, টার্কির মাংসে ক্যালোরি ও কোলেস্টেরল বেশ কম, কিন্তু প্রোটিনে ভরপুর। এ ছাড়াও টার্কির মাংসে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও ট্রিপটোফেন থাকে, যা মানবদেহে সেরোটিনিন নিঃসরণে সাহায্য করে। এর ফলে এই মাংস খেলে শরীর-মন শান্ত থাকে। ভাল ঘুমও হয়।
পাঁঠা-মুরগির বদলে কোয়েল বা টার্কিকে জনপ্রিয় করার চেষ্টা প্রাণিসম্পদ দফতরের অবশ্য নতুন নয়। কিন্তু কোয়েল টুকটাক বিক্রি হলেও শীতের মরসুম ছাড়া বাঙালির টার্কি-প্রীতি তেমন ছিল না। সাহেবিয়ানায় অভ্যস্ত বাঙালিরাও কয়েক বছর আগে পর্যন্ত ডিসেম্বর মাস পড়লে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট বা নিউ মার্কেটে টার্কির জন্য হাজির হতেন। কিন্তু রাজ্য প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর গৌরীশঙ্কর কোনার দাবি করেছেন, স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণেই হোক কিংবা মুখের স্বাদ বদলাতে, সেই বাঙালিই এখন টার্কির প্রেমে মজেছে। তিনি বলেন, ‘‘২০১৭-’১৮ আর্থিক বছরে হরিণঘাটার বিপণন কেন্দ্রগুলিতে মোট ৪ টন টার্কির মাংস বিক্রি হয়েছে। আগের অর্থবর্ষে এর পরিমাণ ছিল মাত্র ১ টন।’’ নিগমের কর্তারা বলছেন, টার্কির মাংসের চাহিদা বাড়ায় চাষিদের এই পাখির খামার নিয়ে আগ্রহ বা়ড়ছে। ফলে অনেক চাষিই টার্কির ছানা খামার থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।