ধান চাষে জলের জোগান খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু খামখেয়ালি আবহাওয়ায় জল নিয়ে নিশ্চয়তা কই? তাই বিকল্প হিসাবে ফল চাষে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। বিশেষ করে আম, মুসাম্বি লেবু এবং আঙুর চাষে জল কম লাগে। কিন্তু এই সমস্ত ফলের বাজার খুবই ভাল। আয় বেশি। রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলে অর্থাৎ বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের শুখা আবহাওয়ায় এই ধরনের ফল চাষ করলে লাভের মুখ নিশ্চিত।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এই এলাকাগুলি সম্প্রতি পরিদর্শন করে বলেন, ‘‘এলাকার চাষিদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা বলেছেন, জলের অভাব থাকায় ধান বা অন্য কোনও চাষ করা সহজ নয়। কিন্তু কম জলে ফল চাষ হওয়ায় চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছেন। কৃষি দফতরও তাই ফল গাছ লাগাতে চাষিদের উৎসাহিত করবে।’’ ফল চাষের প্রসারে অবশ্য অনেক দিন ধরেই প্রচার চালাচ্ছে উদ্যান পালন দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরের উদ্যান পালন দফতরের উপ-অধিকর্তা কুশধ্বজ বাগ বলেন, “আম, পেয়ারা, কলা ইত্যাদি চাষে খরচের তিন গুণ লাভ। ফি বছর আমরা বিভিন্ন ফলের চারা বিলি করি। ধান-আলুর পাশাপাশি যাতে ফল চাষও বাড়ে তার জন্য প্রচার চলছে।” আগামী সপ্তাহ থেকেই চলতি আর্থিক বছরের জন্য ফলের চারা বিলি শুরু হবে। ইতিমধ্যে চাষিদের তালিকা তৈরি হয়ে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্লক অফিসে চারা মিলবে।
ফল চাষের আর একটা সুবিধা হল, খরচের নথি জমা দিলে জাতীয় উদ্যান পালন মিশন তহবিল থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়। পশ্চিম মেদিনীপুরে যেমন এবার এই তহবিল থেকে ২৯ লক্ষ টাকা উদ্যান পালন দফতরে এসে গিয়েছে। জেলা পরিষদের সেচ ও কৃষি কমার্ধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ বলেন, “প্রত্যন্ত গঞ্জের চাষিরাও যাতে ফল চাষে আর্থিক সহায়তা পান, সেদিকে নজর রাখি আমরা।” প্রশাসনের তৎপরতার ফল মিলছে হাতেনাতে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বছর চারেক আগেও তিন-চার হাজার হেক্টর জমিতে যেখানে ফল চাষ হত, চলতি বছরে সেখানে সাড়ে বারো হাজার হেক্টর জমিতে নানা ধরনের ফল চাষ হচ্ছে। মূলত আম, কাঁঠাল, পেঁপে, কলা, জামরুল। গড়বেতার বড়মুড়ার বিমল সরকার দীর্ঘ দিন ধরে পেয়ারা চাষ করছেন। এবার সরকারি চারা পাবেন শুনে পেয়ারার সঙ্গে আম চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি। ঘাটালের উত্তম ঘোষ এত দিন শখে এটা-ওটা ফল চাষ করেছেন। সরকারি চারা আর উদ্যান পালন মিশনের অর্থানুকূল্যে এ বার বাণিজ্যিক ভাবে ফল চাষের তোড়জোড় করছেন তিনি। বাঁকুড়ার ছাতনার কাছে বেশ কয়েকটি গ্রামে একটি বেসরকারি সংস্থা কয়েকশো আম গাছ লাগিয়েছিল। প্রচুর আম হয়েছে সেখানে। দুবাইয়ে রফতানি হয়েছে সেই আম। নবান্ন সূত্রে জানা যায়, রাজ্যে ১৯৪টি কৃষি খামারের প্রতিটিতেই আলাদা করে জমি চিহ্নিত করে ফলের গাছ লাগিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। জোর দেওয়া হচ্ছে বিপণনেও। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণমন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার সঙ্গে এই নিয়ে কথা চলছে বলে জানিয়েছেন পূর্ণেন্দুবাবু।