DA case in Supreme Court

সন্দেহজনক! ডিএ-শুনানি নিয়ে মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের, বকেয়ার ২৫% কেন দেওয়া হল না? প্রশ্ন তুলল আদালত, কী বলল রাজ্য

সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। ছ’সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য টাকা দিতে পারেনি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০২৫ ১১:১৩
Share:

সোমবার সুপ্রিম কোর্টে ডিএ মামলার শুনানি হয়েছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

কেন নির্দেশমতো বকেয়া মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-র ২৫ শতাংশ সরকারি কর্মচারীদের দেওয়া হল না? প্রশ্ন তুলল সুপ্রিম কোর্ট। ডিএ-র ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে রাজ্যকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। ছ’সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে রাজ্য টাকা দিতে পারেনি। বরং আদালতের কাছ থেকে আরও ছ’মাস সময় চাওয়া হয়। সোমবার সেই সংক্রান্ত শুনানিতে আদালত প্রশ্ন তোলে, কেন সময়ে টাকা দেওয়া হল না? রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়, আদালতের নির্দেশ তারা কার্যকর করতে চায়। কিন্তু সময় লাগবে। কারণ, ২৫ শতাংশ বকেয়া ডিএ মেটাতে হলে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। সেই অর্থ জোগাড় করতে সময় লাগবে।

Advertisement

রাজ্য আগে জানিয়েছিল, তাদের আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তাই বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানিয়েছিলেন রাজ্যের আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় করোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে সোমবার এই মামলাটি উঠেছিল। রাজ্যের তরফে জানানো হয়, আগামী সোমবার এই মামলার শুনানি হোক। অন্যান্য পক্ষও শুনানির জন্য সময় চায়। সরকারি কর্মচারীদের একাংশের আইনজীবী করুণা নন্দী বুধবার শুনানির পক্ষে সওয়াল করেন। এতেই সন্দেহ হয় আদালতের। কেন সব পক্ষ ডিএ মামলার শুনানির জন্য প্রস্তুত নয়? প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি কারোল। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আজ সন্দেহজনক দিন। এখনই আমরা পুরো মামলার শুনানি করব। আপনি সওয়াল শুরু করুন।’’ এতে মামলার বিভিন্ন পক্ষ আপত্তি জানায়।

বিচারপতি জানতে চান, ডিএ মামলার শুনানির জন্য কোন পক্ষের কত সময় লাগবে? প্রয়োজনে কিছুটা সময় দিয়ে সোমবারই বেলা ১২টা থেকে শুনানির ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। পরে বিচারপতি জানিয়ে দেন, আর কাউকে কোনও সময় দেওয়া হবে না। মঙ্গলবারই এই মামলার শুনানি হবে। সব পক্ষকে মঙ্গলবারের মধ্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।

Advertisement

গত ১৬ মে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। রাজ্যের তরফে প্রবল আপত্তি জানিয়ে বলা হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ কর্মচারীকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে এমন কোনও বরাদ্দ নেই। রাজ্যকে যদি এই অর্থ দিতে হয়, তা হলে ঋণ নিতে হবে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি দরকার। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া রাজ্যের যুক্তি ছিল, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়। ঐচ্ছিক বিষয়। এটি কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয় রাজ্য। ডিএ নিয়ে আরওপিএ ২০০৯ নিয়মাবলির উল্লেখও করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বলা হয়েছিল, রাজ্য এই নতুন নিয়মাবলি চালু করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, কত হারে ডিএ বৃদ্ধি পাবে, তা রাজ্য নির্ধারণ করে থাকে। কেন্দ্র যে হারে ডিএ দেয়, তা রাজ্যের উপর প্রযোজ্য নয়, কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভিন্ন।

বিভিন্ন প্রকল্পে কেন্দ্রীয় সরকার অনুদান কমিয়ে দেওয়ার ফলে রাজ্যের উপর আর্থিক চাপ পড়ছে, আদালতে যুক্তি দিয়েছিল সরকার। বলা হয়েছিল, শুধু সরকারি কর্মচারী নয়, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন, স্কুল, কলেজের কর্মীদেরও রাজ্য সরকার ডিএ দেয়। কর্মীদের পেনশনও দেয়। তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ সম্ভব নয়। এ ছাড়া, এ রাজ্যে এমন অনেক প্রকল্প রয়েছে, যা অন্য রাজ্যে নেই। রাজ্যের কর্মচারীরা ছুটির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা পান বলেও দাবি করা হয়েছিল আদালতে। এই ছুটির ফলে মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে তাঁরা কিছুটা হলেও রক্ষা পান।

ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ-র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে ২৭ জুনের মধ্যে বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫ শতাংশ মেটাতেই হবে রাজ্যকে। অগস্টে এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত শুনানি হবে। সোমবার সেই শুনানি হওয়ার কথা ছিল। আপাতত শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য হল মঙ্গলবার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement