Advertisement
E-Paper

নির্দেশমতো ২৫ শতাংশ ডিএ-র কী হবে? রাজ্যকে কি আরও ছ’মাস সময় দেওয়া হবে? সোমবার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে মামলাটি উঠবে। রাজ্যকে কি আরও ছ’মাস সময় দেওয়া হবে? আপাতত সেই উত্তরের খোঁজে সব পক্ষ।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০২৫ ২০:৩১
—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

গত মে মাসের শুনানিতে ছ’সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ-বাবদ বকেয়ার ২৫ শতাংশ মিটিয়ে দিতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু রাজ্য ওই সময়ের মধ্যে বকেয়া ডিএ দেয়নি। ঘটনাচক্রে, ছ’সপ্তাহের মেয়াদ যে দিন শেষ হয়েছে, সে দিনই রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করে আরও ছ’মাস সময় চেয়েছিল। সেই সমস্ত কিছু নিয়েই সোমবার শুনানি হবে শীর্ষ আদালতে।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের বেঞ্চে মামলাটি উঠবে। রাজ্যকে কি আরও ছ’মাস সময় দেওয়া হবে? আপাতত সেই উত্তরের খোঁজে সব পক্ষ।

গত ১৬ মে শুনানির দিন বকেয়ার ২৫ শতাংশ মেটানোর বিষয়ে রাজ্যের প্রবল আপত্তি উড়িয়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, তারা চাইলে এখনই রাজ্য সরকারের মামলা খারিজ করে দিতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না। অগস্ট মাসে চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হবে। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের উপরে নির্ভর করবে, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা কেন্দ্রীয় সরকারের হারে ডিএ পাবেন কি না। পেলে বকেয়ার কতখানি এবং কবে থেকে পাবেন। কিন্তু তার আগে রাজ্যকে বকেয়ার ২৫ শতাংশ মেটাতেই হবে।

এর পরেই ২৭ জুন রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে জানায়, তাদের এখন আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। তাই বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ মেটানোর জন্য আরও সময়ের প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনারও আর্জি জানিয়েছিল রাজ্য।

রাজ্য সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছিল, লক্ষ লক্ষ কর্মচারীকে বকেয়া ডিএ-র ২৫ শতাংশ দিতে গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে এমন কোনও বরাদ্দ নেই। রাজ্যকে যদি এই অর্থ দিতে হয়, তা হলে ঋণ নিতে হবে, যার জন্য কেন্দ্রের অনুমতি দরকার। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। তা ছাড়া রাজ্যের যুক্তি ছিল, ডিএ বাধ্যতামূলক নয়। ঐচ্ছিক বিষয়। এটি কর্মীদের মৌলিক অধিকার নয়। তাই কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দিতে বাধ্য নয় রাজ্য।

রাজ্যও এ-ও জানিয়েছিল, তারা একটি নিজস্ব নিয়মাবলি চালু করেছে— আরওপিএ ২০০৯। এই নিয়ম অনুযায়ী, কত হারে ডিএ বৃদ্ধি পাবে, তা রাজ্য নির্ধারণ করে থাকে। কেন্দ্র যে হারে ডিএ দেয়, তা রাজ্যের উপর প্রযোজ্য নয়, কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো ভিন্ন। রাজ্যের চার নম্বর যুক্তি ছিল, কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে (১০০ দিনের কাজ, জাতীয় স্বাস্থ্য অভিযান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা) অনুদান কমিয়ে দিচ্ছে। এতে রাজ্যের উপর আরও আর্থিক চাপ পড়ছে। জিএসটি সংক্রান্ত বকেয়াও কেন্দ্র এখনও দেয়নি, যার পরিমাণ প্রায় ১.৮৭ লক্ষ কোটি টাকা। রাজ্যের আরও দাবি, শুধু সরকারি কর্মচারী নয়, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান, স্থানীয় প্রশাসন, স্কুল, কলেজের কর্মীদেরও ডিএ দেয় তারা। সে কারণে কেন্দ্রের হারে ডিএ দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা কর্মীদের পেনশনও দেয়। এ রাজ্যে স্বাস্থ্যপ্রকল্প, এলিটিসি (ভ্রমণের ভাতা) রয়েছে। এই পরিষেবা অন্য রাজ্যে নেই। রাজ্যের আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা কেন্দ্রের মতো উচ্চ হারে ডিএ দিতে না পারলেও, রাজ্যের কর্মচারীরা ছুটির ক্ষেত্রে অনেক বেশি সুবিধা পান। এই সুবিধাগুলি মুদ্রাস্ফীতির চাপ থেকে তাঁদের রক্ষা করে।’’ সোমবারের শুনানিতে এই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মোট বকেয়া ডিএ–র পরিমাণ ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। এ ছাড়া পেনশন প্রাপকদের জন্য মোট বকেয়া ১১ হাজার ৬১১ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও শিক্ষক, পুরসভা, পঞ্চায়েত–সহ স্বশাসিত সংস্থা ও রাজ্য সরকার পরিচালিত সংস্থার কর্মীদের পাওনা ১৮ হাজার ৩৬৯ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা। সব মিলিয়ে অঙ্কটা ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। তাই রাজ্য সরকারের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে জানিয়েছিলেন, পুরো ডিএ দিতে গেলে রাজ্য সরকারের আর্থিক অবস্থা বেহাল হয়ে যাবে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ মেনে এর ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় ১০ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা ২৭ জুনের মধ্যে মেটাতেই হবে।

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীরা বর্তমানে ১৮ শতাংশ হারে ডিএ পান। কয়েক মাস আগে বাজেট বক্তৃতার সময়েই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চার শতাংশ ডিএ বৃদ্ধির কথা জানিয়েছিলেন। তার পর ১৪ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ডিএ হয় ১৮ শতাংশ। সেই বর্ধিত ডিএ কার্যকর হয় ১ এপ্রিল থেকে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে এ রাজ্যের কর্মীদের মহার্ঘভাতার ফারাক এখনও ৩৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা ৫৫ শতাংশ হারে ডিএ পান।

DA Case Supreme Court
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy